পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ዓ• স্বামীজীর বাণী ও রচন। হওয়া নয়। সকল ভিক্ষুকই কি খ্ৰীষ্ট? দারিদ্র্য ও সাধুতা সমার্থক নয় ; অনেক সময় ঠিক বিপরীত। প্রকৃত ত্যাগ মনের ব্যাপার। কিভাবে এই ত্যাগ আসে ? মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত হইয়া আমি একটি হ্রদ দেখিলাম—চারিদিকে মনোরম দৃষ্ঠাবলীতে বৃক্ষরাজির বিপরীত প্রতিচ্ছবি জলের মধ্যে দেখা যাইতেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবটাই মরীচিকা বলিয়া প্রমাণিত হইল। তখন বুঝিলাম, মাসাবধি প্রতিদিনই আমি এই দৃপ্ত দেখিয়াছি ; শুধু সেদিন তৃষ্ণার্ত হইয়া আমি ঠেকিয়া শিখিলাম যে, উহা মিথ্যা। পরেও—প্রতিদিনই আমি ইহা আবার দেখিব, কিন্তু সত্য বলিয়া আর কখনও স্বীকার করিব না। স্বতরাং আমরা যখন ঈশ্বরলাভ করি, তখন জগৎ দেহ প্রভৃতির ভাব চলিয়া যাইবে । এগুলি পরে ফিরিয়া আসিবে, কিন্তু তখন আমরা এগুলি মিথ্যা বলিয়াই জানিব । পৃথিবীর ইতিহাস বুদ্ধ ও খ্ৰীষ্টের মতো মহাপুরুষদের জীবনেতিহাস । নিষ্কাম ও অনাসক্ত ব্যক্তিরাই বিশ্বের সর্বাপেক্ষা কল্যাণ করেন। দীনদরিদ্রের বস্তিতে যীশুর কথা ভাবো। দুঃখের পারে স্বরূপ দর্শন করিয়া তিনি বলিয়াছিলেন, ‘ভাই সব, তোমরা সকলে ঈশ্বরের সন্তান।’ তাহার কর্ম শাস্ত, নীরব। দুঃখের কারণগুলিই তিনি দূর করেন। যখন তুমি সত্যসত্যই জানিবে যে, এই কর্ম নিতান্তই মায়া, তখনই জগতের হিতের জন্য কিছু করিতে পরিবে। এই কর্ম যতই অজ্ঞাতসারে কৃত হয়, ততই ভাল হয়, কারণ তাহা হইলেই কর্ম চেতনভাবের আরও উর্ধের্ব উপনীত হয়, অতিচেতন হয়। ভাল বা মন্দ কোনটাই আমাদের সন্ধানের বিষয় নয়, তবে মুখ ও মঙ্গল দুঃখ ও অমঙ্গল অপেক্ষ সত্যের নিকটতর। একজনের আঙুলে একটা কাটা বিধিয়াছিল, আর একটি কাটা দিয়া সে ইহা তুলিয়া ফেলিল । এই প্রথম কাটাটি মন্দ, আর দ্বিতীয়টি ভাল। আত্মা সেই শাস্তি, যাহা ভাল ও মন্দ উভয়কেই অতিক্রম করে। বিশ্বসংসার বিলীন হইয়া যায়, তখনই মানুষ ভগবানের নিকটবর্তী হইতে থাকে। ক্ষণেকের জন্য সে স্বরূপ ফিরিয়৷ পায়, ঈশ্বরই হইয়া যায়। আবার ঈশ্বরপ্রেরিত পুরুষরূপে তিনি আবিভূত হন ; তখন জগৎ-সংসার তাহার সম্মুখে কঁাপিতে থাকে। মুখ নিত্রিত হয়, মূৰ্খরুপেই জাগরিত হয়। অজ্ঞান মানুষ—অতীন্দ্রিয় জ্ঞান লাভ করিয়া, অনস্ত শক্তি পবিত্রতা ও প্রেমের অধিকারী হইয়া দেব-মানবরূপে ফিরিয়া আসে । অতীন্দ্রিয় অবস্থার ইহাই কার্যকারিত।