পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা ילר כי নই। তথাপি এই চেতন থাকিয়া যায় যে, আমি মুক্ত। এই চেতনা কিভাবে আসে, তাহাই আমাদের ব্যাখ্যা করিতে হইবে। ক্রমশঃ আমরা দেখিতে পাইব, আমাদের মধ্যে এই দুইটি প্রেরণা আছে। আমাদের যুক্তি বলে, সব কার্ষেবই কারণ আছে, সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক প্রেরণাদ্বারা আমরা আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করিতেছি। বেদান্তের মীমাংসা এই—মুক্তি বা স্বাধীনতা ভিতরেই আছে, আত্মা যথার্থই মুক্ত ; কিন্তু জীবাত্মার কর্ম শরীর-মনের ভিতর দিয়া পরিশ্রুত হইয়া আসিতেছে ; এই শরীর ও মন স্বাধীন বা মুক্ত নয়। যখনই আমরা কোন ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া করি, তখনই আমরা উহার দাস হইয়া পড়ি । কেহ আমার নিন্দ করিল, তৎক্ষণাৎ ক্রোধের আকারে আমি প্রতিক্রিয়া করিলাম। ঐ ব্যক্তি যে সামান্য স্পন্দন স্থষ্টি করিল, তাহাতেই আমি ক্রীতদাসে পরিণত হইলাম। অতএব আমাদের মুক্ত-স্বভাব প্রদর্শন করিতে হইবে । শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, নিকৃষ্ট জন্তু বা অতি দুরাচার ব্যক্তির মধ্যে র্যাহারা মুনি জন্তু বা মাহুষ দেখেন না, দেখেন সেই এক ঈশ্বরকে, তাহারাই প্রকৃত জ্ঞানী। ইহজীবনেই তাহারা আপেক্ষিক মান-দর্শন জয় করিয়া এই একত্ব বা সমদর্শনের উপর দৃঢপ্রতিষ্ঠ হইয়াছেন। ঈশ্বর শুদ্ধস্বরূপ, সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন। যে জ্ঞানী পুরুষ এইরূপ অনুভব করেন, তিনি তো জীবন্ত ঈশ্বর । এই লক্ষ্যের দিকেই আমরা চলিয়াছি ; প্রত্যেক উপাসনা-পদ্ধতি, মানবজাতির প্রত্যেক কর্ম এই উদ্দেশ্য লাভ করিবারই প্রচেষ্টা । যে অর্থ চায়, সে মুক্তির জন্যই চেষ্টা করিতেছে—দারিদ্র্যের বন্ধন হইতে নিস্কৃতি পাইবার চেষ্টা করিতেছে । মাকুবের প্রত্যেক কৰ্মই উপাসনা, কারণ মুক্তিলাভ করাই তাহার অন্তর্নিহিত ভাব, এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সব কর্মই সেই উদ্দেশ্যের অভিমুখেই চলিয়াছে। যে-সকল কর্ম সেই উদ্দেশ্বের পথে বাধা, শুধু সেগুলি বর্জন করিতে হইবে । জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে সমগ্র বিশ্বই উপাসনা করিতেছে ; মান্তষ শুধু জানে না যে, যখন সে কাহাকেও অভিশাপ দিতেছে, তখনও সে অার একভাবে সেই এক ঈশ্বরেরই উপাসনা করিতেছে, কারণ যাহারা অভিশাপ দিতেছে, তাহারাও মুক্তির জন্ম চেষ্টা করিতেছে। তাহার কখনও ভাবে না যে, কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়। করিতে গিয়া তাহাত্মা নিজেদের ক্রীতদাস করিয়া ফেলে। আঘাতের বিরু:ে প্রতিঘাত করা কঠিন।