শাস্তির কথা মনে আছে। উঁচুতে টাঙানো একটা আড়া বাঁশের সঙ্গে তার দুহাত বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে তাকে বেত মারা হত, এই একটা; আর একটা হচ্ছে বিছুটি গাছ কেটে এনে মেঝেতে বিছিয়ে দেওয়া হ’ত, আর তার উপরে তাকে খালি গায়ে গড়াতে বলা হত। মা বাপেরা গুরুমশায়ের কাছে ছেলে দিয়ে যাবার সময় নাকি বলত—দেখবেন, যেন নাক চোখ কান বজায় থাকে। কত দিন যে আমি পাঠশালায় পড়েছিলুম মনে নেই, তবে বোধ হয় ষোলো ভাঁজে লেখা পর্যন্ত শেষ হয়।
আমাদের পাড়ায় আমার সমবয়সী ছেলেমানুষ কেউ ছিল না। আমারও বাইরের লোকের বাড়ী যেতে ভাল লাগ্ত না। বাড়ীর লোক ছাড়া অপর কারো কাছে বড় সঙ্কুচিত ও লজ্জিত হয়ে পড়তুম। আমি একটা ঘরের কোণে বসে নিজের খেলনা নিয়ে খেলতে খুব ভালবাসতুম। সকালবেলায় উঠে সাজি হাতে করে’ আমাদের ফুলবাগানে পুজোর ফুল তুলতে যেতে আমার বড় ভাল লাগ্ত। ক্রমে যখন পুষ্পপাত্রে পুজোর ফুল দুর্বা বিল্বপত্র কিরকম করে’ সাজাতে হয়, কেমন করে শিব গড়তে হয় এইসব শিখলুম, তখন আমার মা আইমাও যেমন খুসি হলেন, আমারও তেমনি আনন্দ হল। আমাদের বাড়ীতে মা আইমা (আমার মায়ের পিসি) আর পিসিমা এঁরা থাকতেন। পিসিমা কখনো আমাদের বাড়ী, কখনো তাঁর শ্বশুরবাড়ী জগন্নাথপুরে থাকতেন। বাবামশায় কলকাতাতেই থাকতেন, কেবল পুজোর সময় একবার করে’ বাড়ী আসতেন। আইমার শ্বশুরবাড়ী ছিল মজুমদার পাড়ায়, বোধ হয় আমাদের বাড়ী থেকে আধ ক্রোশটাক্ দূরে। আইমা প্রায়ই আমাকে কোলে করে নিয়ে মজুমদার পাড়ায় যেতেন। পথে পাছে আমার খিদে পায় বলে একটা বাটিতে দুধ-ভাত মেখে সেটা গামছায় বেঁধে হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে যেতেন। মজুমদারেরা এক বড় গুষ্টি ছিলেন, তাঁদের আলাদা আলাদা বাড়ী সব কাছাকাছি ছিল, তার মধ্যে বড়র বাড়ীতে দুর্গোৎসব হত। কেবল সেইখানেই সেই