পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১
পুরাতনী 

ছেলেবেলায় আমি দুর্গাপুজো দেখেছি। বলির সময় মজুমদার বাড়ীর সব ছেলেরা খুব আহ্লাদের সঙ্গে চারদিকে ঘিরে দাঁড়িতে দেখত আর বলি হয়ে যাবার পর নাচতে নাচতে পাঁঠার মুণ্ড মাথায় করে নিয়ে গিয়ে দুর্গা প্রতিমার পায়ের কাছে রেখে দিত। আমার কিন্তু আনন্দ হওয়া দূরে থাক্, বলির পাঁঠা আর হাড়কাঠ দেখলে বড় ভয় ও দুঃখ হত। বলির আগে আমি দূরে সরে’ গিয়ে চোখ বুজে কানে আঙুল দিয়ে কেবল বলতুম, “হে মা দুর্গা, আমার উপর রাগ কর’ না।” বলিও দেখতে পারতুম না, অথচ মা দুর্গা সেজন্যে রাগ করবেন বলে’ মনে মনে খুবই ভয় পেতুম। একটা লম্বা ঘরে পুজোর ভোগ রাঁধা হত, সেখানে চক্রবর্তী বাড়ীর মেয়েরা সকাল সকাল স্নান করে এসে রান্না করতেন। আমাদের দেশে সে সময় টাকা দিয়ে রাঁধবার বামুন পাওয়া যেত না। তাই পুজো বা কোন ক্রিয়াকর্মে রাঁধবার লোক দরকার হলে চক্রবর্তী বাড়ীর মেয়েদের অনুরোধ করে ডেকে আনা হত, তারপর কাজকর্ম হয়ে গেলে তাঁদের উপহারের মত কাপড়চোপড় দেওয়া হত।

 নরেন্দ্রপুরের কাছাকাছি দক্ষিণদিহি চেঙ্গটে জগন্নাথপুর প্রভৃতি গ্রামে আমাদের এক এক ঘর আত্মীয় ছিলেন। এই সব জায়গায় আমি আইমার সঙ্গে বেড়াতে যেতুম, তিনি আমাকে খানিক কোলে করে খানিক হাঁটিয়ে নিয়ে যেতেন। কোন আত্মীয়ের অনুরোধে হয়ত দুচার দিন তাঁদের বাড়ী থেকেও আসতুম। সব জায়গাতেই প্রচুর আদর যত্ন পেতুম। এইরকম বেড়ানো আমার খুব ভাল লাগ্‌ত। যখন বাড়ী থাকতুম, একা একা খেলনা নিয়ে খেলা করা ছাড়া আমার আর এক আমোদ ছিল ফাঁদ পেতে পায়রা ধরা। আমাদের পশ্চিমের ঘরে কেউ বাস করতেন না, সেখানে ধান চাল ও নানারকম জিনিস থাকত। তারই সামনের উঠোনে একটা দড়ির এক মুখে ফাঁস দিয়ে তার মধ্যে ধান ছড়িয়ে রাখতুম, আর তার আর এক মুখ ধরে আমি ঘরের দরজায় বসে থাকতুম। যেই একটা পায়রা ধান খেতে আসত অমনি আস্তে আস্তে দড়িটা ধরে টানতুম। ক্রমে ফাঁসটা ছোট হয়ে হয়ে তার পায়ে