রাঁধতে হলে স্নান না করে’ সেইটে স্পর্শ করা হত, অর্থাৎ একটু গায়ে মাথায় ছিটিয়ে দেওয়া হত। একবার আমি অনেকদিন পালাজ্বরে ভুগেছিলুম। সে সময়ে আমাকে যে জিনিস খেতে দেওয়া হত, বাড়ীর আর সকলে কেবল সেই জিনিসই খেতেন। আর কোন খাবার জিনিস সে সময়ে বাড়ীতে আনা হত না, পাছে দেখে আমার লোভ হয়, বা না খেতে পেলে মনে কষ্ট হয়। এখনকার স্বাস্থ্যের নিয়ম সম্বন্ধে যা শুনি ও পড়ি, আমার মনে হয় ছেলেবেলায় অনেকটা সেইরকম নিয়মেই আমাদের খাওয়া-দাওয়া হত। পুকুরে ধরা টাট্কা মাছ, কখনো কচ্ছপের মাংস, কচ্ছপের ডিম, ঘরের গরুর দুধ, গুলেল দিয়ে কেউ মাঝে মাঝে জলের পাখী বা অন্য কিছু শিকার করে আনলে তার মাংস, নিজের বা কোন বাড়ীর বলির মাংসও প্রায়ই হত, হরিণের মাংস কেউ আনলে বাবামহাশয় খুব খুশি হতেন। আমার বাপের বাড়ী ভক্ত শাক্ত পরিবার। হিন্দুর নিষিদ্ধ মাংস ছাড়া আর সব মাংসই সেখানে খাওয়া হত। সকালে প্রথমে উঠেই তো ঐ ‘আনালে’ ভাত খেতুম, দুপুরবেলা ভাতের সঙ্গে কতক রকম শাক-তরকারি, টাট্কা মাছের ঝোল, কচ্ছপের ডিমের বড়া কিম্বা কচ্ছপের মাংসের ঝোল। বিকেলে ঘরের সর-বসানো দুধ, গরম গরম মুড়কি দিয়ে জলখাবার হত। এই খাওয়াটাই আমার সবচেয়ে ভাল লাগত। রাত্রে মাছের ঝোল ভাত, কোন কোন দিন পাঁঠার ঝোল। আমার যখন কর্ণবেধ হয়, আমি বড় কাঁদছিলুম। লোকে আমাকে এই বলে সান্ত্বনা দিলে যে, হয়ে গেলেই সর-বসানো দুধে গরম মুড়কি খেতে পাব। তখন আমি চুপ করে কান বিঁধতে রাজী হলুম। কাপড়ের মধ্যে একখানা শাড়ি পরতুম, আর শীতকালে একটা দোলাই মাথার উপর দিয়ে ঘাড়ের কাছে গিঁঠ বেঁধে দেওয়া হত। নতুন কাপড় পরবার আগে আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল যে, কাপড়ের একদিক থেকে একটা সুতো বের করে নিয়ে সেটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ‘কাঁটা নাও’, ‘খোঁচা নাও’, ‘আগুন নাও’, এইরকম বলে’ বলে’ কাপড়ের অনিষ্টকারী সব জিনিসকে এক এক টুক্রো
পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/১৫
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পুরাতনী
১৪