পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/১৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
 পুরাতনী
১৬

কারো বাড়ী অসুখ-বিসুখ বিপদ-আপদ হলেই হরির লুট মানা হত। যেখানেই হোক না কেন, পাড়ার সকলেই তাতে যোগ দিত। দেবতা অধিষ্ঠিত কোন বট অশ্বখ বা বড় পুরনো গাছতলায়ই প্রায় হরির লুট দেওয়া হত। পাড়ার সকলের সঙ্গে আইমা আমাকেও কোলে করে নিয়ে সেই জায়গায় যেতেন। বাতাসা ছড়ানো আরম্ভ হলে তিনি আমাকে কুড়োবার জন্যে কোল থেকে নাবিয়ে দিতেন। মস্ত লম্বা হাত-পাওয়ালা লোক সব ছুটোছুটি করে হরির লুট কুড়োতেন, আমার ক্ষুদে ক্ষুদে হাত পা তার ভিতরে প্রায় কিছুই কুড়োতে পারত না। কুড়োবার খানিক চেষ্টা করে শেষে কাঁদতে কাঁদতে আইমার কাছে এসে দাঁড়াতুম, তিনি কোলে করে আমাকে সান্ত্বনা দিতেন। আর সেদিনকার কর্তা বা কর্ত্রী আমার কান্না দেখে আবার কিছু বাতাসা আনিয়ে আমার সামনে ছড়িয়ে দিতেন। তাঁদের কথায় সেই বাতাসা নিতুম বটে কিন্তু আগে সকলের সঙ্গে কুড়োতে পারিনি—সে দুঃখটা মন থেকে যেত না। এক এক দিন পাড়ার মেয়েরা সব পরামর্শ করে ঠিক করতেন ‘জাগরণ’ করবেন, পূর্ণিমার রাত্রেই প্রায় করা হত। মেয়েদের সব ঘরকন্নার কাজ খাওয়া-দাওয়া চুকে গেলে পুরুষরা সব শুতে গেলে, যেবার যে বাড়ীতে জাগরণ হবে সেখানকার পরিষ্কার উঠোনে মাদুর পাতা হত। গ্রামের সব মেয়েরা পান হাতে করে এসে জুটতেন, তারপর মাদুরে বসে নানারকম কথাবার্তা হাসি-গল্প এইসব হত। যিনি গাইতে পারেন গাইতেন। আমাদের দেশে ক্ষুদে নাচ বলে একরকম নাচ আছে, তাও কেউ কেউ নেচে দেখাতেন। এইরকমে খুব হাসি আমোদে অনেক রাত কেটে যেত। আমার জাগবার খুব ইচ্ছে থাকলেও খানিক বাদে ঘুমিয়ে পড়তুম। নষ্টচন্দ্রের রাত্রে খুব মজা হত। পাড়াপড়শীর বাড়ী থেকে সেদিন ফল তরকারি প্রভৃতি কিছু একটা চুরি করে আনতেই হবে, এমন করে যাতে ধরা না পড়ে। নিজের বাগানের চোরকে ধরা আর পরের বাগান থেকে ধরা না পড়ে কিছু চুরি