করে আনা—এই নিয়ে খুব ছুটোছুটি হুটোপুটি হাসাহসি পড়ে যেত। আমাকে নষ্টচন্দ্র দেখতে বারণ করে দেওয়া হয়েছিল, কারণ দেখলে কলঙ্ক হয়। নিষিদ্ধ জিনিসের যেমন ফল হয়ে থাকে, সেইদিকে ঝোঁকটা বেশি বাড়ে, তেমনি আমারও নষ্টচন্দ্র দেখবার জন্যে খুব একটা ছটফটানি হত, এদিকে আবার কলঙ্কের ভয়ও খুব হত। যদিও ‘কলঙ্ক’ কথাটা ছাড়া তার মর্মার্থ কী তা জানতাম না, বুঝতামও না। এক একবার চোখ বুঁজে আকাশের দিকে মুখ তুলে একটা চোখ একটুখানি খুলে অল্প দেখে নিয়ে তখনই ভয়ে ভয়ে মুখ নিচু করতুম।
আমাদের বাড়ীর কাছাকাছি নানারকম জাতের লোকেরা বাস করত—ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণেতর জাত, মুসলমান প্রভৃতি। আমার এখন মনে হয় তাদের সকলের পরম্পরের প্রতি ব্যবহার ও কথাবার্তায় বেশ একটা সহজ স্বাভাবিক আত্মীয়তার ভাব দেখতে পেতুম। সকলের সঙ্গেই যেন সকলের একটা কিছু পাতানো সম্পর্ক থাকত। মা মাসি দিদি দাদা যেখানে পাতানো না থাকত, সেখানে বয়স অনুসারে কায়েত ঠাকরুণ, মুখুজ্যে মেয়ে বা ঘোষ মশায়—এইবকম কিছু বলা হত। এরকম সম্বোধন কেমন বেমালুম বাংলা ভাষার সঙ্গে মিশে যায়, যেমন ফুলের সঙ্গে ফুল গাঁথা। আর ‘মিস্টার’, ‘মিসেস্’, ‘মিস’ এই সব শব্দগুলি শুনলে মনে হয় যেন ফুলের গাঁথ্নীর ভিতের মাঝখান থেকে কঠোর খন্খনে ঝন্ঝনে ধাতুর টুকরো এসে পড়ল। মুসলমান ও হিন্দু পাড়াপড়শীর ভিতরেও ঐরকম সম্পর্ক পাতানো থাকত। আমার মনে আছে একটি মুসলমান মেয়ে আমার আইমাকে মা বলেছিল। আইমা তাকে মেয়ে বলতেন আর তার স্বামীকে জামাই বলতেন, ও জামাইষষ্ঠীর সময় তাকে রীতিমত জামাইষষ্ঠী দিতেন। ঘরসংসারের কাজকর্ম সারা হয়ে গেলে বিকেলবেলা সকলে পরস্পরের বাড়ী যাওয়া-আসা করত। মুসলমান চাষীরা সূর্যোদয়ের আগে মিষ্টি খেজুর রস এনে আমাদের খেতে দিত, আর রাত্রি নটা দশটায় সব