রোগা ও ছোট ছিলুম বলে’ কোলে করতে পেরেছিলেন। আমাকে নিয়ে পুতুলের মতো এক কোণে বসিয়ে রাখলেন। মাথায় এক গলা ঘোমটা, আর পায়ে গুজরী-পঞ্চম ইত্যাদি কত কি গয়না বিঁধছে। আমার পাশে একজন গুরুসম্পৰ্কীয়া বসে যৌতুকের টাকা কুড়োতে লাগলেন। আমি তো সমস্তক্ষণ কাঁদছিলুম। আমার শ্বশুর যখন যৌতুক করতে এলেন তখন একটু জোরে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলুম। তিনি জিগ্যেস করলেন—কেন কাঁদছে? লোকে বললে—বাপের বাড়ী যাবার জন্যে। তাতে তিনি বললেন—বল পাঠিয়ে দেব। সকলে বলতে লাগলেন—দেখেছ কী সেয়ানা বউ! ঠিক তাকমাফিক চেঁচিয়ে কেঁদে উঠেছে, যখন শ্বশুর যৌতুক করতে এসেছে। কিছুদিন পর্যন্ত লোকে আমাকে রোজই দেখতে আসত ও নানারকম ফরমাশ করত—উপর বাগে চাও তো মা ইত্যাদি। মেয়েরা কাপড় পর্যন্ত খুলে দেখত। আমি খুব লাজুক ছিলাম। সমবযসীদের সঙ্গে ভালভাবে কথা কইতুম না। ক্রমে ক্রমে সে ভাবটা কেটে গেল।
সেকালে আমাদের অন্দরমহলে এক ছেলে-মানুষ-করা পুরনো লোক ছাড়া কেউ আসতে পারত না। বিবাহিত লোকেরা ছাড়া কেউ রাতে বাড়ীর ভিতর আসতেন না, কিন্তু কখন কখন দিনে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে আসতেন। আমার পাঁচজন নন্দাইদের একজন ছাড়া সকলেই ঘরজামাই ছিলেন। নন্দাইরা প্রায় সকলেই কুলীন ব্রাহ্মণের ঘরের ছেলে, হয়ত কলকাতায় পড়তে এসেছেন, সুন্দর চেহারা দেখে এঁরা ধরে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের পিরালী ঘরে বিয়ে করবার পরে তাঁদের নিজেদের বাড়ীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকত না। একজনের বাপ গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁর ছেলেকে শাপ দিয়েছিলেন শুনেছি।
আমার বড় ননদ সৌদামিনী দেবী আমাদের খুব যত্ন করতেন। বাপের বাড়ীর জন্য যখন কাঁদতুম তখন সান্ত্বনা দিতেন, চুল বেঁধে দিতেন—সে সব তখন কিছুই জানতাম না। ক্রমে ক্রমে যখন ওঁদের