পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/২৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৭
পুরাতনী 

 স্নানের পর সবাই মিলে গল্প করতে করতে একসঙ্গে খেতুম। রান্নাঘরের রান্না বড় ভাল লাগত না, তাই চচ্চড়ি বা ঝোলের মাছ নিয়ে টক কি কিছু দিয়ে খেয়ে নিতুম। পাতে যা থাকত তা দাসীরা খেত, তাছাড়া আলাদা চাল পেত। তখনকার কালে দাসীদের ১৲, চাকরদের ২৲ ২॥০ টাকা এই রকম মাইনে ছিল। পরে ক্রমশ বেড়ে গেল। নতুন দাসী এলে তাদের ঘরের কথা জানতে আমাদের খুব আমোদ বোধ হত। তার স্বামী আছে কিনা, তাকে ভালবাসে কিনা ইত্যাদি। দাসীদের নিচে আলাদা ঘর ছিল, সেখানে খাবার নিয়ে গিয়ে খেত, কাপড় রাখত।

 উনি বিলেত যাবার পর ওঁর মাসহারা আট টাকা আমাকে দেওয়া হল; তাতে নিজেকে খুব বড়লোক মনে করলুম। তার থেকে মাসে মাসে কোন খাবার আনাতুম, দাসীদেরও খাওয়াতে ভালবাসতুম।

 বিয়ের পরে আমার সেজদেওর হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইচ্ছে করে আমাদের পড়াতেন। তাঁর শেখাবার দিকে খুব ঝোঁক ছিল। নিজের মেয়েদেরও সব লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। আমরা মাথায় কাপড় দিয়ে তাঁর কাছে বসতুম আর এক একবার ধমকে দিলে চমকে উঠতুম। আমি বিয়ের আগেই লিখতে পড়তে পারতুম আর আমার হাতের অক্ষরের খুব প্রশংসা ছিল। আমার বাবামশায় একটা পাঠশালা খুলেছিলেন। সেখানে মুসলমান পর্যন্ত বড় বড় ছেলেরা যেত; কেবল আমি একলা ছোট মেয়ে ছিলুম। আমার যা কিছু বাংলা বিদ্যা তা সেজঠাকুরপোর কাছে পড়ে। মাইকেল প্রভৃতি শক্ত বাংলা বই পড়াতেন, আমার খুব ভাল লাগত; এখনো লাগে। উনি বিলেত থেকে ঠাকুরপোকে লিখে পাঠিয়েছিলেন আমাকে ইংরিজী শেখাতে, কিন্তু সেটা অক্ষরপরিচয়ের বড় বেশি এগোয় নি। সেজন্য বোম্বাই গিয়ে ওঁর কাছে খুব বকুনি খেয়েছিলুম, বেশ মনে আছে।

 তখন বাড়ীর ছেলেদের জন্যে একজন কুস্তিগির পালোয়ান মাইনে করা থাকত। ছেলেরা সকলেই কুস্তি শিখত। কুস্তির জন্য গোলা-