বাড়িতে একটা আলাদা চালাঘর ছিল। তাতে অনেকটা ঢিলে নরম মাটি কিরকম তেল দিয়ে মাখা থাকত, যাতে পড়লে না লাগে। বম্বে গিয়েও প্রথম প্রথম উনি ঐরকম মাটির আখড়া তৈরি করাতেন। সেজঠাকুরপোই বেশি কুস্তি করতেন। বোধ হয় ছেড়ে দেবার পর যে বাতে ধরল তাতেই অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সে মারা গেলেন। উনিও দাঁও প্যাঁচ খুব জানতেন। আর শীতকালে ভোরবেলা ঈডেন গার্ডেনে হেঁটে যাবার একটা নিয়ম ছিল। সেখানে দরজা বন্ধ থাকত ও কেউ গেলে সান্ত্রী বলত “হুকুম সর্দার” অর্থাৎ who comes there?
উনি বিলেত যাবার সময় আমাকে দিদিমার হাতে সঁপে দিয়ে গেলেন। আমার মনে আছে একদিন রাত্রে বেশ জ্যোৎস্না হয়েছে, আমরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, মাঝখানে দিদিমা, একপাশে উনি আর একপাশে আমি। আমি লজ্জায় কিছু বলছিনে, কিন্তু চোখে একটু একটু জল আসছে। উনি দিদিমার হাতে আমাকে দিয়ে বল্লেন—একে তোমার মেয়ের মত দেখ। ওঁর কথা দিদিমা যথার্থই রেখেছিলেন। আমাকে তিনি খুবই যত্ন করতেন। যখন পূর্ণিমার দিন খুব জ্যোৎস্না হত, আমি কিছুতেই ঘরে থাকতে পারতুম না, ছাতে ঘুরে ঘুরে বেড়াতুম। শীতকাল হলে দিদিমাকে আমি একটা কম্বল মুড়ি দিয়ে দিতুম, বেচারা বুড়োমানুষ বসে থাকতেন। এই জ্যোৎস্না ভালবাসবার কথা ওঁর বম্বের চিঠিতেও পরে উল্লেখ করেছেন।
বিলেত থেকে উনি আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন। আমি লিখতুম কিনা মনে নেই। ফিরে এসে বম্বে থেকে যখন কলকাতায় আসতুম, তখন আমাদের নিয়মিত চিঠি লেখালিখি চলত। ওঁর সে সময়কার খানকতক চিঠি এখনো আমার কাছে আছে। আমার মেয়ে সেগুলো নকল করে দিয়েছে, নইলে পুরনো কাগজ সব খসে খসে পড়ছিল।