মনোমোহন ঘোষ ওঁর সঙ্গেই বিলেত গিয়েছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে ওঁদের যাওয়া হল, কিন্তু তিনি সিবিল সার্বিস পাশ করতে পারলেন না,—উনি করলেন। তবে সেজন্য তাঁর কোনো ক্ষতি হয়নি, কারণ পরে তিনি খুব বড় ব্যারিস্টার হয়েছিলেন। তিনি স্ত্রীর সম্বন্ধে বেশ ভাল ব্যবস্থা করেছিলেন। সমাজে বের করবার আগে তাঁকে কন্ভেণ্টে দিয়ে ইংরিজী লেখাপড়া শিখিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার সে সুযোগ হয় নি। তবে সে সময়ে আমাদের খালি এক শাড়ি পরা ছিল, তা পরে’ তো বাইরে যাওয়া যায় না। তাই উনি কোনো ফরাসী দোকানে ফরমাশ দিয়ে একটা কি পোশাক আমার জন্য করালেন,—বোধহয় তাদের মতে Oriental যাকে বলে। সেটা পরা এত হাঙ্গাম ছিল যে ওঁর পরিয়ে দিতে হত, আমি পারতুম না। দুচারখানা শাড়িও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলুম।
কর্তামশায় আমাকে বম্বে নিয়ে যাবার অনুমতি দিলে, আমাকে ঐ পোশাক পরিয়ে ঘেরাটোপ দেওয়া পালকি করে জাহাজে তুলে দেওয়া হল। জাহাজে অপরিচিত বিদেশী খাবার খেতে আমি অভ্যস্ত ছিলুম না। উনিই আমাকে সব করেকর্মে দিতেন। মতি বলে একজন চালাক মুসলমান চাকর সঙ্গে নিয়েছিলেন। উনি সংসারের বিশেষ কিছু বুঝতেন না, তারই হাতে সব ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে তার বদলী যখন অন্য চাকর এল, তখন বুঝলুম সে আমাদের কত ঠকিয়েছিল। ওঁর যেমন যেমন মাইনে বাড়ত সবই নিয়ে নিত। ক্রমে আমিও সংসারের কাজ একটু একটু শিখলুম।
বোম্বে গিয়ে আমরা প্রথমে মানেকজী করসেদজী নামে এক ভদ্রলোকের পরিবারে গিয়ে উঠলুম। এখান থেকেই সেটা ঠিক হয়ে ছিল। তিনি তাঁর দুই মেয়েকে এখানে লেখাপড়া শিখিয়ে পরে বিলেত ঘুরিয়ে এনেছিলেন। তাদের নাম আইমাই ও সিরীণবাই। ওঁরা বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিলেন, ইংরেজ বড়লোকের সঙ্গে যাতায়াত ছিল।