পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 পুরাতনী
৩৪

খড়খড়ির বারাণ্ডায় দাঁড়িয়ে দেখতুম, তার বেশি কখনও যেতুম না। সেইটেই অন্দরমহলে যাবার পথ। উনি যেদিন বম্বেতে প্রথম dinner party দিলেন, আমার মনে আছে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিলুম যে খাবার টেবিলে কিছুতেই বসব না, যদিও টেবিলাদি সব সাজিয়ে দিয়েছিলুম। যেই একজন সাহেব আমার হাত তার হাতের ভিতর নিয়ে টেবিল পর্যন্ত নিয়ে গেল, অমনি আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলুম। পরে অবশ্য খাবার নিমন্ত্রণ করা, টেবিল ভাল করে সাজানো ইত্যাদি আমার খুব অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। রাঁধবার ভাল লোক ছিল বলে আমাদের খানারও সুখ্যাতি হত।

 Miss Mary Carpenterকে উনি বিলেতে চিনতেন। তিনি বুড়োবয়সে সখ করে এদেশ দেখতে এসেছিলেন ও আমাদের সঙ্গে কিছুদিন ছিলেন। তখন আমি খুব কমই ইংরিজী বলতে পারতুম, কোনরকম করে তাঁর কথা বুঝতুম। তিনি খুব গোঁড়া একেশ্বরবাদী (Unitarian) খ্রীস্টান ছিলেন ও নিজের দেশে জেলে গিয়ে কয়েদী দেখা প্রভৃতি নানা হিতকর কাজ করতেন। রামমোহন রায়কেও বোধ হয় বিলেতে চিনতেন। তিনি এদেশে মন্দির দেখতে চাইতেন না—পৌত্তলিকতা বলে। আহমদাবাদের বেচরদাস নামক একজন ধনী ব্যক্তি তাঁর জন্য একটা নিমন্ত্রণ সভা করে একে একে তাঁর তিন স্ত্রীকে আলাপ করিয়ে দিলেন। First Mrs. Becherdas, তারপরে Second Mrs. Becherdas পর্যন্ত Miss Carpenter কোনরকম করে সইলেন; তারপর যখন Third Mrs. Becherdas এল তখন তাঁর মুর্ছা হয়ে পড়বার উপক্রম, একেবারে চৌকির উপর হাত-পা ছেড়ে দিয়ে পড়লেন। একজনের যে তিন স্ত্রী থাকতে পারে, এরকম অধর্মের কাণ্ড তাঁর পক্ষে এতই অভাবনীয় যে, একটা কথাও বলতে পারলেন না।

 যে সূর্যকুমার চক্রবর্তীকে দ্বারকানাথ ঠাকুর ডাক্তারী শেখাতে