কোলে নিতেন না। যারা সুন্দর তাদেরই ডাকতেন, অন্যদের নয়। তাই আমি ভাবলুম যে মা যদি আমার ছেলেদের ডাকেন তবেই বুঝব যে তারা সুন্দর হয়েছে।
আমরা সিন্ধুদেশে হাইদ্রাবাদ ও শিকারপুরে গিয়েছিলুম। সে দেশটা খুব শুকনো ও গরম। ইংরেজরা নাকি বলে যে ভগবান যখন সক্কর স্মৃষ্টি করেছেন, তখন নবক সৃষ্টি করবার কী দরকার ছিল? বিকেলে ওঁর কাজ হয়ে গেলে আমরা নৌকো করে সিন্ধু নদে বেড়াতে যেতুম। আর সঙ্গে একটি শিখ ছেলে যেত, সন্ধ্যায় সে গান করত “গগন মে থাল রবিচন্দ দীপক বনে, তারকা মণ্ডল চমকে মোতিরে”—বেশ লাগত। সুরেনের এক চাকর ছিল, তাকে সব কথায় ‘ক্যাওয়াস্তে’ বলে বলে বিরক্ত করে মারত। শেষকালে সে এক জবাব দিত ‘পেট্কাওয়াস্তে’। ওখানকার লোকে খুব তীরন্দাজ,—একজনের হাতের তীর আর একজন তীর দিয়ে কাটবে। তাই সুরেনও খুব তীর ছুঁড়তে শিখেছিল।
ওদেশে জলের খুব অভাব। তাই খুব গভীর গর্ত খুঁড়ে কুয়ো করে। আর ছোট ছোট কলসির একরকম মালা দড়িতে বাঁধে, সেটা একটা চাকার উপর লাগিয়ে দেয়। সেই চাকা ঘুরিয়ে দিলে প্রত্যেক কলসিতে জল ভরে যেই কুয়োর মুখে আসে, তখন তার কাছে কাটা একটা নালার মধ্যে জলটা পড়ে যায় ও ক্ষেতের ভিতর চারিয়ে যায়।
ওখানকার ‘পাল্লা’ বলে একরকম মাছ খুব বিখ্যাত—আমাদের ইলিশ মাছের মত। খালি হাঁড়ির উপর বুক দিয়ে জেলেরা ভাসতে ভাসতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়—ধরে সেই হাঁড়ির মধ্যে রাখে। আমার এক আয়া ছিল, সে বলত—‘পাল্লা মচ্ছি খানা, সিন্ধ্ মুলুক ছোড়কে নহি যানা।’
ওখানকার বড় লোকদের বলে মীর। তাদের স্ত্রীরা খুব পর্দানলীন, কারও সামনে বেরয় না। ওঁর সঙ্গে কত লোকের আলাপ ছিল, কিন্তু তাদের স্ত্রীদের কখনও দেখিনি। মিস্ কাপেণ্টার আসতে একজন দুপুর রাত্রে তাঁকে বাড়ীর ভিতর নিয়ে গেল, যাতে কেউ টের না পায়।