আমার আর একটি পুত্রসন্তান বোধ হয় সিন্ধুদেশেই হয়। তার নাম রেখেছিলুম কবীন্দ্র, ডাকনাম চোবি। এই তিনটি ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দ আন্দাজ বিলেত যাই, যতদূর মনে আছে। সেই সময় এক ইংরেজ দম্পতী বিলেত যাচ্ছিল। তাদের সঙ্গে উনি আমাকে পাঠিয়ে দিলেন, বোধ হয় ওদের ভাষা কায়দাকানুন শেখবার জন্য। কারণ আমার স্বামী ইংরেজ সভ্যতার খুব ভক্ত ছিলেন। কিন্তু জাহাজে সমুদ্রপীড়ার জন্য আমার বড় কষ্ট হয়েছিল, প্রায়ই শুয়ে থাকতুম। তখন রামা বলে আমাদের এক সুরতী চাকর ছিল, তাছাড়া এক মুসলমান চাকর বিলেত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েই দেশে ফিরে গেল। সে জাহাজে আমাদের খুব যত্ন করেছিল।
উনি আমাদের জ্ঞাতি শ্রীযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুরকে আমার বিলেত যাবার কথা লিখেছিলেন। তাঁরা আমাদের নাবিয়ে নিতে জাহাজে লোক পাঠিয়েছিলেন। তিনি খ্রীস্টান হয়ে খ্রীস্টান কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে বিয়ে করেছিলেন বলে তার বাপ প্রসন্নকুমার ঠাকুর তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলেন। সেই অবধি তিনি সপরিবারে বিলেতে বাস করছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে ছিল—বলেন্দ্রবালা ও সত্যেন্দ্রবালা, তাঁদের ডাকনাম ছিল বালা ও সতু। জ্ঞানেন্দ্রমোহনের রং খুব সাফ ছিল। তিনি আদরের ছেলে ছিলেন বলে বাপ অল্প বয়সে যশোরের এক সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই স্ত্রীর তিনি খুব অতুগত হয়ে পড়েছিলেন, এমন কি পাখার বাতাস দিয়ে ঘুম পাড়াতেন ও দিনরাত কাছে কাছে থাকতেন। সেই স্ত্রী মারা যেতে তিনি খুব অস্থির হয়ে পড়েন, সেই সময় কৃষ্ণ বন্দ্যোঃ নামে এক পাদ্রী তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে খ্রীস্টান করে ফেল্লেন। বাপের মৃত্যুর সময় নাকি তিনি একবার দেখা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল বলে ঢুকতে পারেন নি।