পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১
পুরাতনী 


এই দুইএর তারা তুলনা করত। আমরা Nice-এ একটা হোটেলে ছিলুম। সেখানে ছেলেমেয়েদের একটু একটু ফরাসী শেখাবার জন্ম হোটেলের চাকরদের কাছে নিজে গিয়ে দুধ জল প্রভৃতি চাইতে বলতুম।

 আর একটি সুন্দর ছোট সাদা কুকুর সেখান থেকে এনেছিলুম বলে’ তার নাম রেখেছিলুম Nicois। দেশে এলে বাড়ীর দু’ একটি ছেলে তার ভেউ ভেউ ডাক শুনে ভয়ে খাটের উপর উঠে পড়ত মনে আছে। কিন্তু সে আসলে দুষ্টু ছিল না, কামড়াত না। ট্রেনে তাকে টুকরিতে লুকিয়ে বেঞ্চির তলায় রেখে দিলে সে স্টেশনে থামবার সময় গার্ডকে গাড়িতে আসতে দেখলে ভেউ ভেউ করে নিজের অস্তিত্ব জাহির করত, তাও মনে আছে। হোটেলে আমার মেয়ের চুল দেখে কোন মেম নাকি বলেছিল যে ঠিক যেন কালো রেশমের মত। তাই আবার বিবি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলে সে কথা ঠিক কিনা। আর তাকে একটা ছোট পুতুল দিয়েছিলুম; তার সঙ্গে একবাক্স কাপড় ছিল, বদ্‌লে বদ্‌লে পরাবার জন্য। সেই পুতুলটাকে খাবার টেবিলে বিবি রেখে দিত, আর হোটেলের ওয়েটর তাকে ক্ষেপাবার জন্যে তুলে তুলে নিয়ে যেত।

 ফরাসীদের জাতীয় সঙ্গীত Marseillaise আমার খুব ভাল লাগত। এখনো একটু একটু মনে পড়ে। ওখানে একটা বাড়ী ছেড়ে যখন আর একটা বাড়ীতে উঠে গেলুম তখন প্রথম বাড়িওয়ালী খুব রেগে গেল, বল্লে—এখানে যেরকম ভাল খাবার পাও সেখানে কী তা পাবে? –একটু একটু ফরাসী বলতে পারতুম। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ফরাসী বলতে পারি কিনা; তাতে আমি বল্লুম—Je ne parle pas francais; তখন তিনি বল্লেন, এইত বল্লে। আর একটা কথা মনে আছে, রাস্তা কোথায় জানতে হলে বলতে হত Par où faut-il prendre pour aller অমুক জায়গায়। Ollendorf-এর একরকম বই পাওয়া যেত তাতে কথাবার্তা চালান একরকম শেখা যায়। ছোট ছেলেপিলে নিয়ে এই অল্প জ্ঞান নিয়ে বিদেশে যে কি করে কাটিয়েছিলুম, আর উনিই বা কি করে এই অবস্থায় আমাকে