“যশোর নগরধাম প্রতাপ আদিত্য নাম”—সেই যশোর নগরধামের অধিকারভুক্ত নরেন্দ্রপুর গ্রাম আমার জন্মস্থান। শুনেছি নরেন্দ্র রায় বলে এক প্রবলপ্রতাপ লোক ছিলেন, তাঁর নামে এই গ্রামের নামকরণ হয়। বংশের পরিচয় বিষয়ে আমার বিশেষ কিছু বলবার নেই। সেই সুদূর বালিকাকালের ঝাপ্সা স্মৃতিপটে সনতারিখশূন্য অগ্রপশ্চাৎ সীমাবিহীন যে দুচারটে জিনিস অঙ্কিত আছে, তাই বলছি।
শুনেছি আমার ঠাকুরদাদারা কৃষ্ণনগর অঞ্চলের লোক ছিলেন। তাঁরা নাকি কুলীন ব্রাহ্মণ ফুলের মুখুটি ছিলেন। মায়ের মুখে শুনেছিলুম যে, তাঁর শ্বশুরের নামের সঙ্গে মেলে বলে তিনি ‘নীল’ আর ‘কম্বল’ এই দুটো কথা উচ্চারণ করেন না, তাই বুঝেছিলুম যে তাঁর নাম ছিল নীলকমল মুখোপাধ্যায়। আমার বাবামশায় আট নয় বৎসর বয়সকালে, কি কারণে জানিনে, তাঁর বাপের উপর রাগ ও অভিমান করে’ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। লক্ষ্যহীনভাবে পথে চলতে চলতে তিনি যশোরের দক্ষিণদিহি গ্রামে এসে উপস্থিত হলেন। সেই গ্রামে সে সময় রায়বংশের একটি বড় ও সঙ্গতিসম্পন্ন পরিবার বাস করতেন। ঘটনাক্রমে বাবামশায় সেই পরিবারের কর্তাব্যক্তির সামনে এসে পড়েন। তিনি দিব্য একটি সুন্দর ছেলে দেখে, তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে কাছে ডেকে নামধাম ও সমস্ত পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। বাবামশায় তাঁর নামধাম ও বংশপরিচয় যা দিলেন তাতে রায়মহাশয় যেন বেশ সন্তুষ্ট হলেন, আর বল্লেন,—তুমি ছেলেমানুষ, একলা একলা কোথায় ঘুরে বেড়াবে; আজ থেকে আমার এখানে থাকো। পরের ঘটনা থেকে মনে হয় যে, প্রথম থেকেই রায়মশায়ের