পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
 পুরাতনী

আমার ভাবী শাশুড়ী ঠাকুরাণীকে আমাকে দেখাতে নিয়ে যান, আর তাঁর এক ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা বলেন। এত জাঁকজমক গোলমালের মধ্যে আর বেশীদিন থাকতে মায়ের ভাল লাগছিল না। তাই বাবামশায় আমাদের নরেন্দ্রপুরের বাড়ীতে এনে রেখে গেলেন।

 আমরা প্রথমে যে বাড়ীতে ছিলুম, সে বাড়ীর কথা আমার বিশেষ কিছু মনে পড়ে না। তারপর যে আর এক জায়গায় থাকতে গেলুম, সেই বাড়ীর ঘরদের আমার কিছু কিছু মনে আছে। আলাদা আলাদা এক-একখানা ঘর, একটা দক্ষিণের, একটা পশ্চিমের আর একটা উত্তরের—সেইটেই সবচেয়ে বড়। এই তিন ঘরের সামনে একটা বড়ো উঠোন। দক্ষিণের ঘরের একটু পিছন দিকে রান্নাঘর, তার সামনে আর একটা উঠোন। সমস্ত ঘরগুলির চারিপাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। দক্ষিণের আর উত্তরের ঘরের মাঝের পাঁচিলে সদর দরজা ছিল। দরজার বাইরে উত্তর দিকে একটা বড় ঘর ছিল আর দক্ষিণ দিকে দরওয়ানদের থাকবার একটা ঘর ছিল। তার পরেই চারিদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটা ফুলবাগান ছিল। বাগানের প্রতি বাবামশায়ের অসাধারণ অনুরাগ ছিল। সেই ফুলবাগানে তিনি অনেকরকম দুর্লভ ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন। পশ্চিমের দিকে অনেকটা জমি ছিল। তাতে একটা পুকুর কাটিয়েছিলেন, তার এক পাড়ে একটি বড় কলাবাগান আর অপর তিন পাড়ে অন্যান্য গাছ লাগানো ছিল। সেই পুকুরের জলেই আমাদের স্নান পান রান্না সব কাজ চলত। একবার বাবামশায়ের গুরুমশায় এসে কথায় কথায় বলেছিলেন যে, সব দানের চেয়ে বিদ্যাদান বড়। তাই থেকে বাবামশায়ের মনে হল যে পাঁচিলের বাইরে উত্তরের বড় ঘরটায় একটা পাঠশালা বসাবেন। তার জন্য একজন গুরুমশায় রাখা হল, আর শীঘ্রই অনেক পোড়ো এসে জুট্‌লো। পাঠশালা রীতিমত চল্‌তে লাগ্‌ল। তখন বাবামশায়ের মনে হল যে, বাড়ীতেই যখন পাঠশালা হল, গুরুমশায়ও রাখা হল, তখন আমার মেয়েটিকেও পাঠশালায় পড়তে দিই—ছোট মেয়ে, তাতে বোধ হয় কোন দোষ হবে না। সে