পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রামের চড়কতলার মেলা থেকে হাসিমুখে ছেলে মেয়েরা মেলা দেখে ফিরে যাচ্ছে -কারুর হাতে বঁাশের বঁাশী, কারুর হাতে মাটীর রং করা ছোরা, মাটীর পান্ধী। একদল গেল। গাঙ্গুলীপাড়ার দিকে, একদল নতিডাঙ্গার মাঠের পথ বেয়ে ঘেটু ও নোনিবনের ধার দিয়ে ছাতিম বনের ছায়ায় ছায়ায় ধুলজুড়ি মাধবপুরের খেয়া ঘাটে যাচ্ছে-পার হ’য়ে ওপারের চাষা গায়ে যাবে। পাঁচ বৎসর আগে যারা ছোট ছিল, এই রকম মেলা দেখে ভোপু বাজাতে বাজাতে তেলে ভাজা জিলেপী খেতে খেতে ফিরে গিয়েছিল—তারা এখন মানুষ হ’য়ে অনেক দিন কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রবেশ ক’রেছে, কেউ খুব নাম ক’রেছে, কেউ কেউ মারা গিয়েছে, কারুর জীবন ব্যর্থতায় দীনতায় ভ’রে গিয়ে বেঁচে থেকেও নেই-আজিকার এই নিষ্পাপ, অবোধ, দায়িত্বহীন জীবনকোরকগুলোর পচিশ বৎসরের ভবিষ্যত জীবনের ছবি কল্পনা করতে কড় ভাল লাগে। দিদি, দুৰ্গা যেন রুক্ষ্ম চুলে হাসিমুখে অচিলে কদমা বেধে নিয়ে মুচকুন্দ-চ্যাপার অন্ধকার তলাটা দিয়ে বাড়ী ফিরছে --অপু-ওঅপু-তোর জন্যে কত খাবার এনেছি। দ্যাথরে,-ও অপু। পচিশ বৎসর এর পর থেকে ডাক আসে । ৷৷ ১লা বৈশাখ, ১৩৩৫ সাল ৷ আজকার দিনটি সত্যিই মনে ক’রে রাখবার মত।--সেই সকালে আটটার সময় ঘোড়া ক’রে-বার হওয়া গেল। কমলাকুণ্ডু গ্রামের বাড়ী বাড়ী রুগী দেখে বেড়ালাম। কৈসুর মেয়ে, বেহারীদের বাড়ী-বেলা প্ৰায় বারোটার সময় ফিরে এসে গণপৎদের গায়ে গেলাম । সেখানে যাবার সময় বস্তুর এদিকে কাশের মাঠটা থেকে পাহাড় বেশ দেখাচ্ছিল । ভাবলাম সব লোকে আমাদের গায়ে নীলপুজোর দিন দুপুরে কাদামাটা দেখতে গিয়েছে-ছাড়ানো ধানগুলো এখনও কাদার ওপরে, ভাল ক’রে গাছ বার হয়নি। ঝমােঝম ক’রছে। দুপুর-গণপৎদের বাড়ী গিয়ে ওদের বাড়ীর মধ্যে সব ঘুরে ঘুরে দেখা গেল-তারপর দইএর সরবৎ খেয়ে ঠাণ্ডা হলাম। এপারে যুগল শিশি হাতে ক’রে ঔষধ নিতে এল --সব কাজ মিটিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম। ললিতবাবুর সঙ্গে দেখা ক’রতে দ্বিারা কাছারীতে। সেখানে তরমুজের সরবৎ ও লুচি ইত্যাদি ললিতবাবু খাওয়ালেন। --কিছুতেই ছাড়লেন না । সাড়ে তিনটার সময় সেখান থেকে বেরুলামপথে ললিতবাবুর সঙ্গে Eistein সম্বন্ধ কথাবাৰ্ত্ত হ’ল। ঝম্ ঝিম করছে রুদ্দুর —আমরা গেলাম কমলাকুণ্ডু সেই বস্তীটার কাছে তিন সীমানার মীমাংস। 68