পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর ভাগ্যহত ছেলেমেয়েদের করুণ দুঃখের কাহিনী শুনে চোখে জল আসে ? মন আকুল হয়ে ওঠে ? আৰ্ত্তের কান্না শুনে অন্যমনস্ক হয়ে যাও ? তবে তুমি অনন্ত জীবনের উত্তরাধিকারী । তোমার সুখের সীমা ভাবে না। সে খুসি আনন্দের মধ্যে দিয়ে নয়, দুখের মধ্যে দিয়ে। নক্ষত্রে নক্ষত্রে দেখে বেড়িাও, কত দীন দরিদ্র, আতুর জীব কঠিন সংগ্রামে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে, । নির্জন নদীর তীরে কেউ হয়ত বসে বসে কাদছে- ওদের চোখের জল মুছে দেবার চেষ্টা কো’র, তাদের সঙ্গে কেঁদো, সেই তোমার স্বৰ্গ হবে । চোখের জলেই এ বিশ্বসৃষ্টি ধন্য হয়েছে। চোখের জল, কান্না, অত্যাচার না থাকলে বিশ্বের সৌন্দৰ্য্য থাকতে না। সব সুখ, সব পরিপূর্ণতা, সব ঐশ্বৰ্য্য, সব সন্তোষ, শান্তি, কেমন মরুভূমির মত ভয়ানক খ খ করতে!-মাঝে-মাঝে আৰ্ত্তদের চোখের জলের শ্যামশান্তিভার ওয়েসিস আছে বলেই তা করুণ মধুর হয়েছে । জ্যোৎস্ন! যাপন ওঠে, তখন অনেকদিন আগে মরো-যাওয়া ছেলের কথা। ভেবে-দেখবে, জোৎস্ন| মধুর করুণ হয়ে এসেছে । পাখীর গানে করুণ গৌরীর উদাস, মীড় ধ্বনিত হচ্ছে। যে বুড়ীটা গ্রামের পাচজনের কাঁটা লাথি খেয়ে কিছুদিন আগে ঘরে ছেড়া কঁথার মধ্যে জল অভাবে মৃত্যু তৃষ্ণ নিবারণ করতে না পেরে মরেছিল তার কথা ভেবো – মন উদার শোক ও শাস্তিতে ভরে আসবে।-- জগতের পবিত্র কারুণ্যের, আশাহত ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে অন্তরের অনাহী” ধ্বনি কাণে বাজাবে। ৬ সে পরের বাথায় কঁদিতে শেখেনি জর্গত সে গণি দুৰ্ভাগ্য' এক অতি অদ্ভুত জীবনরস থেকে সে বঞ্চিত হয়ে আছে । কুকুরের ঘেউ ঘেউ যেন একটু থেমেছে। অন্ধকার যেন আরও একটি গভীর হয়েছে । তারাটা আরও নেমে গিয়ে গাছের ডালের আড়ালে পড়েছে - কি রুদ্র প্রচণ্ড তাণ্ডব গতি কি শান্ত নিরীহ তার আড়ালেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে । ঝির বির বা তাসে নিমফুলের গন্ধ আসছে-বাতাবী লেবুফুলের গন্ধ अछ् । তখনও আবার ফাস্তুন চৈত্র মাসে পাড়াগায়ের বনে বনে ঘেটু ফুল ফুটে, বৈঁচিগাছের নতুন কচি পাতা গজায়, দক্ষিণ বাতাস বয়, পাতার ফাঁকে ফঁাকে দোয়েল কোকিল ডাকে । কিন্তু তারা আর নেই-সময়ের পাষাণবায়ু বেয়ে তারা কোথায় কতদূর চলে গিয়ে কোন দূর অতীতে মিশে গিয়েছে। ৷৷ ৪ঠা ফেব্রুসারী, ১৯২৬, ভাগলপুর। R