পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরে সেই কল্পনা দৃষ্ট বৃদ্ধ ও তার দীন বাজিকর ছিন্ন বেশ, কয়লা কালিৰুলি-মাখা হাত-পা চোখের সামনে দেখতে পাচ্চি । v< সাহিত্য-শিল্পীদের জীবনের প্রতিবিম্ব । সে যুগে তারা জন্মেছে, তাদের চেষ্টা হয় সকল দিক থেকে সেযুগের একটা স্থায়ী ইতিহাস লিখে রেখে যাওয়া । এই বৰ্ত্তমান যুগে যারা জন্মেছেন, তারা এই সমযের একটা কাহিনী লিখবেন। অনস্তের এক মুহুর্তের কথা, তবুও জগতের ভাণ্ডারে থেকে যাবে। এই যুগের সেক্সপীয়র হোমার বাল্মিকী কালিদাস রবীন্দ্রনাথ তাজমহাল (Great War এই কল-কারখানা, সামাজিক বিপ্লব, এই বিভূতি, শুন্য, ভারতে স্বরাজ নিয়ে মহাদ্বন্দ্ব, বাদলায় এই ম্যালেরিয়া, বার্ণার্ডশ’ বা ওযেলস্ ইবানেজ, মেটােরলিঙ্কের প্রতিভা, আমেরিকার ধনী ভ্ৰমণকারীদের এই পৃথিবীময় ছড়িয়ে যাওয়া, জাপানের ভূকম্পন- এই সবশুদ্ধ জড়িযে এই যুগটার নানা দিকের কাহিনী, ইতিহাস লেখা হবে । প্রত্যেক লোকই তার নিজের অন্য ভূতি লেপবার অধিকারী । ফুল, ফল, লতা, পাপী, সমুদ্র, মা-বাপ, ছেলেমেয়ে সব আছেই-আমি তাদের কি রকম দেখলাম সেইটাই আসল কথা । জীবনটাকে আমি কি রকম পেলাম, সেইটাই সকলে জানতে চায় । স্থােত অজ্ঞাতনামা লেখকই কেন হোক না, তার সত্যিকার অন্তভূতি কখনো কৌতুহল না জাগিয়ে পারে না-পড়বেই সেটাকে সকলে । সকলেই পেলার তাবুর বাহির দুযারে অপেক্ষা করছে।-রহস্যভরা খেলাটা সকলের ভাল লাগে। কিন্তু ভাল বুঝতে পারে না।--তাবুর বাইরে এলেই পরস্পরের অভিজ্ঞতার অ৷ দানপ্রদান ও তুলনা হয়-“মশাই কিরকম দেখলেন ? প্রত্যেক মানুষই নতুন চোখে দেখে-প্ৰত্যেকেরই অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন। তাই সকলেরই কথা কৌতুহল জাগায়। সাহিত্য শুধু জগতটাকে কে কি চােখে দেখেছে তারই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কাহিনী । বর্ণিত নায়ক-নায়িকার পিছনে শিল্পী তার আবাল্য-দীর্ঘ জীবনের সকল সুখদুঃখ, হাসিকান্না নিয়ে প্রচ্ছন্ন রয়েছেন । কল্পনাও কিছু না। কিছু অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে তবে শূন্যে ভর করে- যেমন, সনেটের পিছনে, (, তেমনি হ্যামলেটের পিছনে সেক্সপিয়ার গুপথ থেকেও ধরা দিয়েছেন । তাই এই যুগে জন্মে আমি সকল রকম বিচিত্র জীবন-ধারার অভিজ্ঞতা চয়ন করে তার কাহিনী লিখে রেখে যাবো । আমি জগতকে কি রকম দেখলাম ? } আমার শৈশব কি রকম কাটল ? কোন কোন সার্থীকে আমি আনন্দ মুহূৰ্ত্তে । দেখলাম ? কাদের চোখের হাসি আমার মনকে অমৃতরসে স্নিগ্ধ করলে ? SS