পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গতিশীল পলাতক অনন্তের প্রবাহ থেকে তাদের উদ্ধার করে লেখার জালে তাদের বেঁধে যাবো-সুদীর্ঘ ভবিষ্যৎ ধরে ভবিষ্যৎ-বংশধরেরা তাদের কাহিনী জানবে। আর হয়তো এ পথে আসবো না, হয়তো আবার যুগযুগান্ত পরে ফিরে আসবো-কে জানে ? বহুকাল পৃথিবীর সন্তানগণের মনে এ লেখা এ ইতিহাস কৌতুহল জাগাবে-তাজমহলের ধ্বংসস্তৃপ যেন মাহেঞ্জোদারোর মত, গভীর মাটির রাশির মধ্যে যাকে খুড়ে বার করতে হবে।--Great War-এর কথা মহাভারতের কি হোমারিক যুদ্ধের কাহিনীর মত প্রাচীন অতীতের কথা হযে দাড়াবে-কলকাতা সহরটা বঙ্গোপসাগরের তলায় ঢুকে যাবে।--সেই সুদূর অতীতে নতুন যুগের নতুন শিক্ষাদীক্ষায় মানুষে এ সব কাহিনী আগ্রহের সঙ্গে পড়বে। বলবে-আরে দেখ দেখ, সেই সে কালেও লোকে এমনি ভাবে বিয়ে করতে যেতো ! এই রকম জমি নিয়ে মারামারি করত, মেয়ের বিFায্যের সময় কঁদিতো ? ভারী আশ্চৰ্য্য হয়ে যাবে তারা । a. যুগযুগাস্তের শাসনে জীবন দেব তা বসে বসে শুধু হাসবেন। ৷৷ ১৬ই সেপ্টেম্ব, ১৯২৭ ৷৷ আজ অনেকদিন পরে পরিচিত সেই বনটার ধারে গিযে বসলাম । সন্ধ্যার আর বেশী দেরী নেই। পশ্চিম আকাশে অপূর্ব রাঙা মেঘের পাহাড়, সমুদ্র, কত বিচিত্ৰ মহাদেশের আবছায়া । সামনের তালবনগুলো অন্ধকারে কি অদ্ভুত যে দেখাচ্ছে ! চারধারে একটা গভীরতা, অপরূপ শান্তি, একটা দূরবিসপিত ইঙ্গিত । এই স্থানটা কি জানি আমার কেন এত ভাল লাগে! যখনই আমি এখানে সারাদিন পরে আসি তখনই আমার মনে হয়। আমি সম্পূৰ্ণ অন্য এক জগতে চলে গিয়েছি। এই গাছপালা, মটরলতা, পাখীর গান, সন্ধ্যাকাশে বর্ণের ইন্দ্ৰজালএ অন্যজগৎ-আমি সেই জগতে ডুবে থাকতে চাই-সেটা আমারই কল্পনায় গড়া আমারই নিজস্ব জগৎ, আমার চিন্তা, শিক্ষা, কল্পনা, স্মৃতি সব উপকরণে 이 1 নীচের জলাটা যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের জল-সেখানে অধুনালুপ্ত হিংস্র অতিকায় সরীসৃপ - বেড়াতো-সামনের অন্ধকার বনগুলি কয়লার যুগের আদিম অরণ্যানী-আমি এই নিস্তািন্ধ সন্ধ্যায় দেখি কত রহস্য, কত অপরূপ পরিবর্তনের কাহিনী, কত ক’রে ইতিহাস ওতে আঁকা, কত যুগযুগের প্রাণধারার সঙ্গীত । 8 R