পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরদিন বড়বাসার ছাদে বসে বসে সন্ধ্যাবেলা ভাবছিলাম অনেক কথা । জীবনে কত ভাল জিনিষ পেয়েছি সে কথা-আগাগোড়া ভেবে দেখলাম। কি গ্রামেই জন্মেছিলাম ! এইতো আরা জেলা, ছাপরা জেলা ঘুরে এলাম। কোথায় সেই পরিপূর্ণ, সুন্দর, সিন্ধ শ্যামলতা, সেই বঁাশবন ঝোপঝাপ । বড় ভালবাসি তাদের, বড় ভালবাসি, বড় ভঙ্গলবাসি। কেউ জানেন। কত ভালবাসি। আমি আমার গ্রামকে-আমার ইছামতী নদীকে, আমার বঁাশবন, শেওড়া ঝোপ, র্কোদালীফুল, ছাতিম ফুল, বাবলা বনকে । সে ছাযা সে স্নিগ্ধস্নেহ আমার গ্রামের, সে সব অপরাহ-আমার জীবনের চিরসম্পদ হয়ে আছে যে , , , , তারাই যে আমার ঐশ্বৰ্য্য। অন্য ঐশ্বব্যাকে তাদের কাছে যে তৃণের মত গণ্য করি । এই শীতের অপরাহ্ন, রাঙা রোদ যখন বাবলা বনে লেগে থাকে তখন শৈশবে কতদিন শুমছায়া ঘনিয়ে আসা ইছাম তীর তীরে নির্জনে বসে বর্ষার ভাঙ্গনের শিমুলতলার দিকে চেয়ে জীবনের মরণের পারের এক রহস্যময় অজানা অনন্তলোকের স্বপ্ন আবছায়া আবছায়া ভাবে মনে আসতো-কতদিন চেয়ে থাকতাম শিমুল তলার নীচে লক্ষণ জেলের শাওড়ি ক্ষুদে গোয়ালা যখন মারা গেল, তাদের পোড়ানোর জায়গার দিকে -কেমন যেন উদাস উদাস ভাব, দিগন্তবিস্তৃত মাধবপুরের উলুখড়ের মাঠটার বহুদূর পর থেকে কে যেন হাতছানি দিত। তারপর সত্যি সত্যিা কত ভাল জিনিষই পেলাম। গৌরী, সেই বনগায়ের গাড়ীতে বসা, সেই বেলেঘাট ব্রিজ ষ্টশনে আমাদের প্রথম ও শেষ ঘরকন্না, সেই আয়না ধরি করে দেওয সেই চিঠি বুকে করে মাথায় কপালে ঠেকানোর কথা মনে হ’য়ে পুলক হয়। তারপর চাটগায়ের সুন্দর দিনগুলো- জানি ! ফরিদপুরের সত্যবাবুদের বাড়ী ? তারপর এক সুন্দর জীবনের period চললে । সেই নয়। বৎসরের ক্ষুদ্র বালককে কি ভালই বাসি । তার সেই মামা জুতো মেরেছে বলে কান্না, সেই মক্কামদিনায় যাওয়া বালিশ, সেই ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’ । এ সব চলে যাবে জানি। আবার নূতন আসবে জীবনে। আরও কত-কত আসবে। এও ঠিক, একদিন সব বন্ধ হয়ে যাবে। একদিন স্নিগ্ধ অপরাহ্নে, বাবলা বনের ছায়ায়, ইছামতীর তীরের বনঝোপের বিহঙ্গ তানের মধ্যে, নীরৰ শাস্তির কোলে এ জীবনের দেওয়া-নেওয়া সব শেষ হয়ে যাবে । কিন্তু তাতে কি ? মানুষ অনন্তের যাত্রী। তার পথ ঐ দূৱ ক্ষীণ নক্ষত্রের পাশ কাটিয়ে দূর কোন অনন্ত লোক অনন্ত কালের পথিক, যাত্রী সে-তার যাওয়া-আসা কি ফুরাবে হঠাৎ ? ¢ፃ