পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী মানুষের মনের ইতিহাস, তার প্রাণের ইতিহাস। কাবুল যুদ্ধ কি করে জয় করা হয়েছিল, সে সবের চেয়েও খাটি ইতিহাস । এই যুগ যুগব্যাপী বিশাল মানবজাতি-শুধু তাও নয়-এই বিশাল জীবজগৎ -কোন মহাওঁপন্যাসিকের কলমের আগায় বেরুলো উপন্যাস । অধ্যায়ে অধ্যায়ে ভাগ করা আছে। মহাসমুদ্রগর্ভে বিলীন কোন বিস্মৃত যুগের আটলান্টিক জাতির বিস্মৃত কাহিনীও যেমন এর কোনো অধ্যায়ের বিষয়ীভূত ঘটনা তেমনি আজ মাঠের ধারে বন্যশৃগালের নখদন্তে নিহত নিরীহ ছাগশিশুর মৃত্যুতে যে বিয়োগান্ত ঘটনার পরিসমাপ্তি হ’ল তাও এর এক অধ্যায়ের কথা। ঐ যে কচুঝাড বঁাশবনের আওতায় শীর্ণ হয়ে হলদে হয়ে আসছে- ওর কথাও । কিন্তু এ উপন্যাস মানুষের পাঠের জন্যে নয়। মানুষ। শুধু মাটি পাথর খুঁডে, এতে ওতে জোড়া তালি দিয়ে, দস্যবৃত্তি করে লুকিয়ে চুরিয়ে এর এক আধ অধ্যায় চাবি-অ্যাটা পেটরা থেকে দিনের আলোয় এনে পড়ছে-সব বুঝতেও °Cछ क्रा । ৷৷ ৩০শে নভেম্বর, ১৯২৭, ইসমালিপুর। সন্ধ্যার আগে লাখপতি মণ্ডলের টােলার পেছনের কুন্ডাটা পার হয়ে ঘোড়া কাশজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খুব ছুটিয়ে রামজোতের পুরোনো বাগান দিয়ে নীচের কুন্ডীটাতে গেলাম। লাখপতিদের টােলার মাথার উপরে রাঙা টকটকে লাল সূৰ্য্যটা অস্ত যাচ্ছে। শীতের সন্ধ্যায়। কাশজঙ্গলের ধারে ধারে কেমন সোদ। সোদা ঠাণ্ডা গন্ধ। কুন্ডীটার ধার দিয়ে খুব জোর করে ঘোড়া ছুটিয়ে কুন্ডী পার হয়ে সামনের সেই কুন্ডীটা যেটার ধারে সেদিন লাল হাস বসেছিল-আমি যেতে যেতেই উড়ে গেল,-মারতে পারিনি-সেই কুন্ডীটার ধারে গেলাম। পাখী। কোথাও কিছু নেই। দূরপ্রসারী ঈষৎ অন্ধকার কাশজঙ্গলের মাথার উপর তাকিয়ে ভাবছিলাম-নয় বছর আগে ঠিক এমন দিনগুলোতে বারাকপুরের বাড়ীতে সেই হরিরায়ের বাড়ীতে বসা-হরিপদ দা-সেই শোকের দিনগুলো আজ কোথায় কি হয়ে গিয়েছে। জঙ্গলের পাশ দিয়ে দেখলাম দুটি হাঁস জলে সাতার দিচ্ছে কিন্তু বন্দুকটা আনিনি। কতকগুলি Snipe-ও ছিল, এদেশে বলে চাহ-বন্দুক থাকলে সুবিধা হোত । তারপর খুব জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে চলে এলাম। e