পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটু হামবড়া ভাব। ক’দিন বড় হৈ চৈ গেছে—আমি ওসব ভালবাসি। জগতের পেছনের যে নির্জন জগৎটা আছে, তা শুধু শান্ত সন্ধ্যায, স্নিগ্ধ বনের লতাপাতার সুরভিতে আমার কাছে ধরা দেয-গভীর রাত্রের জ্যোৎস্নায় আসে। এটর্ণি অফিসের ব্ৰিফসঙ্কল কল-কোলাহল কৰ্ম্মমুখর জীবন আমার বিষের মত ঠেকে। তাই আজ শান্ত বৈশালে যখন কল্যবলিয়া নদীতে নৌকা পার হচ্ছিলাম, তখন বড় ভাল লাগল। এই আকাশ, এই বৈকাল, এই শ্যামল শাস্তি, এই অপূৰ্ব্ব উদার জগৎ-সন্ধা, জোৎস্ন। আমার জীবনে এরাই অক্ষয় হয়ে থাকুক। চাই ন! তোমাদের দশ হাজার টাকার চেক, মিনার্ভা মটরগাড়ী, পেলিটীর বাড়ীর খানা, অমুক এটর্ণির অন্ত আয়ের বিষয় সম্পত্তি। তোমাদের মর্টগেজ ট্রান্সফার প্ৰপাটিজ এণ্ট, কেবল, ওয়ার বণ্ড তোমাদের থাকুক -এই নিঃসীম নীলশ্বনা, ওই তারকারাজি শেষ রাত্রির জোৎস্নায় নাগকেশর ফলের সুরভি, কতদিন-হারা ছেলেমেয়েদের অস্পষ্টপ্রায় মুখগুলো আমার আপনার হয়ে থাকুক। বেশ মনে আছে, বহুকাল আগের শৈশবে, সেই শিউলি ফুলের তলায় ওদিককার ঘাসবনে যখন চড়াই পার্থী, দায়েল পার্থী বসতো, এই শীতের দিনে প্রথম প্ৰভাতের রাঙা রোদ্রে পিঠ পেতে বসে মায়ের হাতের পিঠে খেতে যে অপূৰ্ব্ব কল্পনা জগতের স্বপ্ন দেখেছি—আমার বাশবনের ভিটার প্রতি ধূলিকণায় তার লিখন আছে-কোেনা এটর্ণি আফিসের মর্টগেজ দলিল দস্তাবেজের মধ্যে তার জুড়ি খুজে মিলবে ? সেই “নন্দসুত নীল নলিনাও” গান, সেই বালক কীৰ্ত্তন, সেই বকুলতলা, নটুকান গাছ, ঝিলবিলে, মুখে পূব-যাওযা ভারত-সেই অদ্ভুত শৈশবস্বপ্ন-আমার সে সবই চিরদিনের সম্পদ হয়ে থাকুক। আর সম্পদ হয়ে থাকুক, এমাসন শেলি চেকভ রবীন্দ্রনাথ, আমার ঐ ছোড়া কালিদাস খানা, রামায়ণ বার্ণার্ডশ-এদেরই আমি চাই, এরাই আমার ঐশ্বৰ্য্য। আজ আবাবা শান্ত গ্ৰাম্যজীবনের মধ্যে এসে পড়েছি । আবার প্রশান্ত জীবন, সুন্দর নক্ষত্ৰিক শূন্য, সন্ধ্যার বিচিত্ৰ কৰ্ণকদম্ব, বলোয়৷ এসে গল্প করছে, বলছে—ম্যানেজার বাবু, তুমি যখন আসছিলে তপন আমি কুলোকুমারের কলাইক্ষেতে বসেছিলাম, তার পর ভাই কডুরিয়া এসেছে, আনন্দিয়া এসেছে-এই সব গল্প করছে। আজি নব বর্ষের প্রথম দিনটা যেমন শান্তিতে কাটল-সারা বছরটা এই রকম কাটুক। ॥ »व्ग उरबांबौ, »०२४ ॥ Vo