পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বছরে সেই তেলির ক্ষেতে ( যেখানে নীল গাই দেখেছিলাম) যাবার সময় যে রকম সুড়ি পথ দিয়ে যেতাম সেরকম। তারপরে কেবলই সবুজ সমুদ্রের মত শস্য ক্ষেত্ৰ-দিক দিগন্তহীন দূর, দূর সুদূর প্রসারী আকাশ। অপূর্ব এ দ্বিরার দৃশ্য ! এরকম নীল আকাশ, এরকম পাহাড়, এ রংএর দূরপ্রসারী শ্যামলতার সমুদ্র আর কোথায় ? মাঝে মাঝে বন্য শুয়োরে শস্যক্ষেত খুঁড়ে ফেলেছে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে নির্জন ফসলের ক্ষেত । এই গভীর বনের ধারে একটা কাশের তৈরী কুঁড়ে-তাতেই চাষী রাত্রে শুয়ে এই ভাষণ হিমবর্ষী রাত্রে ফসল চৌকী দেয়। ওরা পথ হারিয়ে গেল-মালা ঘোড়া নিষে আসছিল । সে বললে, এ কোথায় এলাম ? গোষ্ঠবাবুও দিশাহার। হ’য়ে গেল । আমিও প্রথমটা ঠাহর করতে পেরে উঠলাম না। পরে সিধা পথ পেয়ে খানিকটা আসতে আসতে দূরে কতকগুলো কাশের ঘর দেখে আমি বললাম, এই বার্ল মণ্ডলের টোল। গোষ্ঠবাবু বললেন. না । আমি কিন্তু আর খানিকটা এসে বঁা-ধারে যে পথে লো ধাইটোলা, ঘোড়া ক’রে গিয়ে সে পথটা দেখতে পেলাম । তারপর হেঁটে খানাটা পার হ’যে হুকুমৰ্চাদের বাসার কাছ দিয়ে মানুষ সমান উচু রোড়ীক্ষেত দিয়ে এলাম । মকুন্দা ও জহুরী আজই বৈদ্যনাথ থেকে ফিরে এসেছে। প্রসাদ দিযে গেল। মুকুন্দীকে বললাম, তুমি আমার কাছে আজ রাত্ৰিতে গল্প ক’রবে। বড় আনন্দের দিনগুলো এসব । অভিজ্ঞায় একটা বুঝলাম, আজ যে স্থানটা নতুন, ভাল লাগে না, মন বসে না, যত দিন যায়, যত তার সঙ্গে স্মৃতির যোগ হ’তে থাকে, ততই সেটা মধুর হ’য়ে ওঠে । এই ইসমানিপুর ১৯২৪ সালে আন্দামান দ্বীপের মত ঠেকতো । আজমাবাদকে তো মনে হোত ( ১৯২৫ সালেও ) সভ্য জগতের প্রান্ত ভাগ-- জঙ্গলে ভরা বেনজিয়াম কঙ্গোর কোন নিৰ্জ্জুন উপনিবেশ-আজ কাল সেই আজ-- মাবাদ, এই ইসমানিপুর ছেড়ে যেতে হবে ভেবে কষ্ট হচ্ছে । আজ এমাসনের “Immortality প্ৰবন্ধটা প’ড়ে মনে হ’ল আমার মনের কথা অবিকল তাতে লেখা আছে । কতদিন ব’সে ব’সে ভেবেছি, অন্য জগতের জীবনেও নিশ্চয় চিন্তা, পড়াশুনা, একটা কিছু কাজ নিয়ে থাকবার প্রচুর অবকাশ আছে । হাজার বছর কেটে যেতে পারে। তবুও ব্যক্তিত্ত্ব নষ্ট হবার কারণ কি ? ত্ৰিশ-বত্ৰিশ বছরের স্মৃতিভাণ্ডার যদি এ মধুকে পরিবেশন করে তবে অনন্ত জীবন পথে দুশো তিনশো বছরের স্মৃতির ঐশ্বয্য কি, তা ভাবলেও পুলকে শিউরে উঠতে হয়-হাজার বছরের ? দুই হাজার বছরের ? বিশ হাজার কি লক্ষ বছরের } ৷৷ নবমী, ৩১শে জানুয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ ኴሥ8