পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিন্তা মনে নিয়ে এসে ফেলে। বিহারের ঐ সুদূর প্রসারী প্ৰান্তর, দূরের রৌদ্রে ধোয়া ধোয়া অস্পষ্ট নীল পাহাড় দুটো-পীর পৈতির পাহাড়শ্রেণী, দিলবারের খুবড়ীর পিছন দিয়ে, রামবাবুদের বাসার পিছন দিয়ে একবারে এতমাদপুরের কাছারীর দিকে বিস্তৃত থাকে। বড় মৌন, রহস্যময় মনে হয় এই খরা-রৌদ্র-প্লাবিত চৈত্ৰ-দুপুর। আসতে আসতে রণপাল মণ্ডলের ক্ষেতের কাছে জঙ্গলটার সামনেই দেখলাম জমাদার আসছে। পরশুরামপুর থেকে-বললে, কুলীর সব পৌছে গিয়েছে। জঙ্গলটার কি সোদা সোদা গন্ধ ! বার হ’য়েই লোধইটোলার ধাপটার ওপারে উন্মুক্ত প্ৰান্তর, দূরের পাহাড়, হু হু উন্মুক্ত হওয়া, আবার সেই পাক ফসলের গন্ধ-আঃ এই জীবন। ভাবছিলাম। সেই কত দিন আগে পিসিমা এল, ঠাকুরমাদের পাশের পথটা দিয়ে-আমিও বাবা এসেছি মামার বাড়ী থেকে, পিসিমা কঞ্চিঘাটে-সেই সব দিনগুলো । নেড়ার বাবা এখনও কলিডাঙ্গা লাভবড়পুর ক’রে বেড়াচ্ছে-আর আমাদের বাংলার গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। কচিপাতা গজিয়েছে, কোকিল ডাকছে, কাঞ্চনফুল গাছ আলো| ক’রেছে, • • অবসন্ন গ্রীষ্মবেলায় ঝোপে ঝোপে সুমিষ্ট বনফুলের বাস-বেলের পাতা-চড়কের ঢাক-গোষ্ঠবিহার -কোকিলের কুহু, পাপিয়ার মন-মাতানো সুর, রামনবমী। অন্ধকার হবার সঙ্গে সঙ্গে বালিতে পড়লাম-রাজু সিং এপারেই দাড়িয়েছিল। -জলি পার ক’রে ঘোড়া নিয়ে গেল। দুধে এসে অনেক দুঃখ করতে লাগল ষে, সে তার মেয়ের বিয়ে জমাদারের সঙ্গে দেবে না, তবুও কেন নায়েব তার জন্যে পীড়াপীড়ি করছে । ৷৷ ২০শে মার্চ, ১৯২৮ ৷৷ পরশুরামপুর কাছারীতে অনেকদিন পরে বাস করছি। সেই প্ৰথম ভাগলপুরে এসে হেমন্তবাবুর আমলে কিছুদিন ছিলাম বটে, তারপর সেই একবার এসে বস্তির মধ্যে ঘরটায় ছিলাম। অনেকদিন পরে এখানে কিছুদিনের জন্যে বাস করতে এসে বড় ভাল লাগছে । আজ সকালে উঠে দেখি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বড় মন খারাপ হ’য়ে গেল-কিন্তু একটু বেলা হলেই মেঘটুকু কেটে খুব কড়া রোদ উঠল। গয়ম ও গৈফুর তহশীলদারের সঙ্গে গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে স্নিগ্ধ গভীর শীতল জলে অবগাহন স্নান ক’রে বড় আরাম পেলাম বহুদিন পরে। স্নান করতে কেবলই মনে হচ্ছিল, আমাদের গায়ের ইছামতীর ঘাট থেকে এই 篱教