পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসে আছি-কিন্তু কি বিশালবেগে চলেছি। ৷ নাই এপ্রিল, ১৯২৮ ৷৷ কাল থেকে কি একরকম অজানা খুসিতে মন থেকে থেকে ভরে উঠছে-- ওই দূরের নীল পাহাড়টার পাশের দিকে চেয়ে থাকলেই সে আনন্দটা পাই। কাল তাই ভাবছিলাম, হে বিশ্বদেব, কি অপূর্ব-কাণ্ড সৃষ্টিই করেছ এই মানুষেবা জীবনে, এই বিশ্বে । আজ সকালে উঠে গেলাম গঙ্গাস্নান করতে । ফিরে এসে কালীঘরে কলসী উৎসর্গ ক’রে ভারী তৃপ্তি পাওয়া গেল। শয়োরমারী থেকে সিদ্দেশ্বর নাপিতকে রামচরিত ডেকে আনলে, কারণ মোহনের অসুখ ক’রেছে তারপর খাওযার পর একটু ঘুমানো গেল। বড় গরমটা প’ডে গিয়েছে। দুপুরে রেড়িক্ষেতের কাছটা থেকে ফিরে আসতে হঠাৎ মনে হ’ল, আজি চড়ক, তিরিশে চৈত্র। আমনি সারা গাটা যেন শিউরে উঠল-শত-স্মৃতির দ্বার এক ঝাপটা হাওযায় খুলে গেল ! দুপুরের পর-রৌদ্রভরা আকাশের তলায় হলুদ রংএর বনমুলার ফুল, আকন্দ্ৰফল, বেগুনী-কন্টিকারী ফল পোডো জমিটাতে অজস্ৰ ফুটে অনন্তের সন্ধান এনেছে- আমার খড়ের বাংলা-ঘরের পিছনে । ঐখানটায় দাড়িয়ে দূরের নীল পাহাড়গুলোর দিকে চেয়ে মনে প’ড়ল, এতক্ষণ আমাদের চড়কতলায় হযতো দোকান-পসার ব’সে গিয়েছে।--হয়তো সেই গাছটার ছেলেবেলার মত কঁাটা ভাঙছে-কাল গিয়েছে নীলের দিন । হয়তো গায়ে যাত্রা হবে।--হয়তো কত আনন্দ হচ্ছে-পুরোনো দলের কেউ কাটা ভাঙছে না। নতুল দলের ছেলেপিলেরা, শ’ত জেলে এখনও বেঁচে আছে । আমাদের বাড়ীর ভিটেটাতে নতুন পোতা প’ড়ে আছে, কতকাল আগের এক নব-বর্ষের জলদানের চিহ্ন-দাতা হয়তো বেঁচে নাই। কত যত্নে তোলা ছিল-সেই সজনে গাছটার মত, কত যত্নে সঞ্চয় করা । সামনের বঁাশতলার ভিটেটাতে যে-সব খোলা-খাপরা প’ড়ে আছে, কতকাল আগেকার কোন বিস্মৃতি নব-বর্ষের ঘটদানের ভাঙা কলসীর খোলা-খাপরা সে-সব ? ভাবতেওএইকালের অনন্ত-প্রবাহের চিন্তা করেই গা কেমন শিউরে ওঠে ! সৃষ্টি আছে, চন্দ্ৰ আছে, অসীম বস্তুপিণ্ডগুলো আছে-কিন্তু মানুষ যদি না থাকতো, তবে কিছু না । মানুষ আছে ব’লেই এই সৃষ্টীর শ্ৰেষ্ঠত্ব, সুখের-দুঃখের আনন্দ-উৎস ৷ অজানা গ্রহে নক্ষত্রে কি আছে জানি না, কিন্তু মনে হয় সে-সব У o p