পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি
১০১

চিরুণী, আয়না প্রভৃতি লইয়া—দৌরাত্ম্য করিবার জন্য খোকাবাবু সেখানে উপস্থিত না থাকায়—কেশবন্ধনকারিণী পরম নিশ্চিন্ত মনে চুলে চিরুণী চালাইতে চালাইতে, উঠানে হামান্‌দিস্তায় গরম-মশলা কুটিতে নিযুক্ত দাসীর সহিত গল্প করিতেছিল। অমিয়াকে প্রস্থানোদ্যতা দেখিয়া মীনা একটুখানি দুষ্ট হাসি হাসিয়া কহিল—“আজ কার মন ভোলাতে এমন মোহিনী বেশ গো রাণী?”

 অমিয়ার এ কথায় লজ্জা পাইবার বিশেষ হেতু না থাকিলেও, সে কিন্তু আকণ্ঠ লজ্জার রঙে রাঙিয়া বিজড়িত স্বরে কহিল—“মন-ভোলাবার মানুষ ত ভাই তোমায় ছাড়া আর কাকেও পেলাম না। সাধনা যদি সার্থক হয়ে থাকে, তা’হলে পরিশ্রম মিথ্যে হ’ল না তবু!”

 “তাই নাকি! ভাগ্যবানের তপস্যার ফল—অভাগী আমি—বিনা তপস্যাতেই পেয়ে গেলাম তা’হলে?” বলিয়া আঁচলে চাবির গোছা হইতে একটি বিশেষ গঠনের চাবি বাছিয়া লইয়া সিন্দুরে ডুবাইয়া অমিয়ার শুভ্র ললাটতলে ক্ষুদ্র একটি বালারুণের ফোঁটা দিয়া, অকৃত্রিম মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া মীনা কহিল—“এমন কপালে উঠ্‌তে না পাওয়া যে সিদুরের অভাগ্য—ভাই! দেখ দেখি, এবার কেমন চমৎকার মানালো?”