পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি

তৃপ্তির তাহার আর ছিলই বা কি যে পাইবে? বাহির হইতে তাহাকে দেখিয়া অনেকে মনে করিত, স্বামীর নির্য্যাতন-অত্যাচারের হাত হইতে মুক্তি পাইয়া অকালবৈধব্যেও সত্যবতী হয়ত মনে-মনে খুসী হইয়াছে। কিন্তু আমরা বলিব তাহা নহে। সত্যবতী খুসী ত হয়ই নাই, বরং তাহার শোচনীয় পরিণামে ব্যথিতই রইয়াছিল। কিন্তু সে দুঃখ তাহার নিজের জন্য নহে। ‘আমার কি হইল’ তাহাতে এ ভাব ছিল না, ‘তোমার কি হইবে’ এই চিন্তাই তাহাতে বর্ত্তমান। মনের যখন এমনি অবস্থা, তেমনি সময় বালকণ্ঠের মধুমাখা স্বরে মাতামহের শিক্ষানুসারে ‘মা’ বলিয়া ডাকিয়া অমিয়া মাসীর ক্রোড়ে আশ্রয় লইল— দু’খানি কোমল বাহুলতায় তাহার কণ্ঠ বেষ্টন করিয়া ধরিল। তখন সুখদুঃখের অতীত অবস্থা হইতে ধীরে-ধীরে সত্যবতীর সংসার-বিরাগী চিত্ত আবার সংসারের মায়াজালে কেমন করিয়া যে বাঁধা পড়িয়া গেল, তাহা সেও অনুভব করিতে পারিল না। বালিকার ‘মা’-ডাক বড় মধুর, বড় স্নিগ্ধ লাগিলেও সত্যবতী তাহাকে মা বলিয়া ডাকিতে দিল। যে নারী স্ত্রীর অধিকার লইল না—মনে-প্রাণে স্ত্রী। হইতে পারিল না, ‘মা’ হইবার অধিকার তাহাকে কে দিয়াছে? না—সে ‘মা’ নয়, শুধু মাসী!