পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি
১৯

সে মত বছর না ফিরিতেই তাহাদের বদল করিতে হইয়াছিল। বিবাহের পর প্রথম যেদিন দুই সখীতে মিলিত হইলেন, সত্যবতীর মনে পড়ে, কিরণকে তিনি আরও কত সুন্দর দেখিয়াছিলেন। কিরণের সুখের কথার সেদিন যেন আর শেষ হইতেছিল না। স্বামীর আদর সোহাগ ভালবাসার অফুরন্ত কথায় সে যেন মাতাল হইয়া উঠিয়াছিল। নিজের সৌভাগ্য-গর্ব্বে মাটীতে পা পাতিয়া চলিতেও যেন তাহার বাধিতেছিল, চোখে-মুখে হাসিতে কি অপরূপ শ্রদ্ধা ও প্রেম ফুটিয়া উঠিয়াছিল! সত্যবতী অবাক্ হইয়া সেদিন ভাবিয়াছিলেন, কি তপস্যা করিলে কিরণ হওয়া যায়—অমনি করিয়া স্বামীর রূপগুণের, স্নেহ ভালবাসার কাহিনী শুনাইতে পারা যায়? হায়, তখন কি তাঁহারা জানিতেন যে বিদ্যুৎশিখা শুধু পথিককে পথভ্রান্ত করিয়া অন্ধকারের গাঢ়ত্বই বাড়াইয়া দেয়! বিলাসী ধনীযুবকের রূপের মোহ দুই দিনেই ফুরাইয়া গেল। পত্নীপ্রেমে তাহার তৃপ্তি হইল না।

 বিধবা হইয়া সত্যবতী যেদিন ফিরিয়া কিরণের মৃত্যু শয্যাপার্শ্বে তাহাকে দেখিতে গেলেন, সেদিন আনন্দময়ী কিরণের কঙ্কালসার ছায়ামূর্ত্তি দেখিয়া, লোকের মুখে তাহার বিবাহিত জীবনের পরিশিষ্টটুকু শুনিয়া তাঁহার মনে হইল,