পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি
৩১

আলাদা জায়গা ছিল না। একখানি মাত্র ঘর, আর তাহার সাম্‌নে খানিকটা জায়গা টিনের ছাদ দিয়া ঢাকা। ইহাই হইল ষ্টেশন। ঢাকা জায়গাটিতে মালপত্র নামান ওঠান বা রাখা হয়। যাত্রীরাও এইখানে বসিয়া থাকে। ষ্টেশনের বাহিরে কোথাও জন-মানবের চিহ্ন দেখা যাইতেছিল না। কেবল দূরে একজন বুড়ী-ধোপানী কাপড়ের মোট মাথায় লইয়া চলিতেছিল। দূরে যতদূর পর্যয়ন্ত দৃষ্টি চলে, শুধু সবুজ শস্যের ক্ষেত। আরও দূরে, মেঘের সঙ্গে মেশামিশি পাহাড়ের দৃশ্য। অমিয়া একটি নিশ্বাস ফেলিয়া নিজের জিনিষপত্রের পানে তাকাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। মনে মনে বলিতেছিল—“এ একটি ঘুমের দেশ। না—দেশ বলাও ঠিক্ হবে না, ঘুমন্ত উপত্যকা।” সাদা ধুতির উপর আধময়লা ছিটের কোট গায়ে, আধবয়সী ষ্টেশনমাষ্টার-বাবুটি দড়িবাঁধা টিনের চশমাখানি, নাকে আঁটিয়া, মুখ নীচু করিয়া কতকগুলি কাগজপত্রের উপর ঝুঁকিয়া কি লিখিতেছিলেন। একখানি মাত্র কাঠের চেয়ার ও একটি বার্ণিশওঠা টেবিল মিলিয়া সবসুদ্ধ তাঁহার সম্পত্তি। অমিয়া উপায় না দেখিয়া অগত্যা তাঁহারই শরণ লইল। দরজার কাছে গিয়া আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল—“ঠিকা-গাড়ী কোথায় পাওয়া যায় মশাই?”