পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
স্রোতের গতি

এই দায়ে পড়ার ভাবটা কখন হইতে যে তাহার ভার না লাগিয়া হাল্‌কা হইয়া গিয়াছিল, তাহা সে বুঝিতেও পারে নাই। যেদিন সকাল বেলা খোকা দুধ খাইয়া তাহার কাছে না আসিয়া বাপের কাছে থাকিত, সেদিনকার সকাল বেলার সমস্ত মাধুর্য্যটুকুই অমিয়ার চোখে অঙ্গহীন হইয়া যাইত। সময় যেন কাটিতেই চাহিত না।

 মীনার শিক্ষানুসারে খোকা এখন তাহাকে ‘মাচিম্‌মা’ বলিতে সুরু করিয়াছে। অমিয়ার মনে হয়, বাংলা ভাষার সবটুকু মধুর রস নিঙ্গড়াইয়া বাহির করিয়া বুঝি ঐ শব্দটি রচিত হইয়াছিল। ঐ মাসীমা শব্দটি মনে করিতে গেলেই মনে পড়ে, উপরে তাহার নিজের মাসীমা, আর নীচে হাস্যপ্রফুল্লমুখ অর্দ্ধস্ফুটবাক্‌ আনন্দনির্ঝর এই খোকা। বাগানে আসিবার সময় প্রায়ই সে একখানি ইব্সেন হাতে করিয়া আসিত, ইচ্ছা থাকিত বইখানি পড়ে, কিন্তু একজন স্ত্রীললাকের পক্ষে—তা সে যতই কেন মানসিক ক্ষমতাশালিনী হউক না—এক সঙ্গে, একটি কলহাস্য মুখর এগারো মাসের দুরন্ত খোকা ও ইব্‌সেন দুইয়ের প্রতি মনোবোগিনী হওয়া বোধ করি সম্ভবপর হয় না। খোকা যতক্ষণ জাগিয়া থাকিত, বেচারা ইব্‌সেনকে ততক্ষণ প্রায়ই একটা ফ্যাঁক্‌ড়া বাহির-করা পেয়ারা গাছের কোটরের মধ্যে আশ্রয়গ্রহণ