পাতা:হত্যাকারী কে? - পাঁচকড়ি দে.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



১০
হত্যাকারী কে?

  সন্ধ্যার পর শুক্লাষ্টমীর কি সুন্দর চন্দ্রোদয় হইয়াছে! জ্যোৎস্না-প্লাবনে নক্ষত্রোজ্জল নির্মেঘ আকাশ কর্পূরকুন্দধবল। অদূরবর্ত্তিনী প্রবহমান তটিনীর সুমধুর কলগীতি অস্পষ্ট শ্রুত হইতেছিল। সম্মুখস্থ পথ দিয়া কোন যাত্রাদলের বালক “দাসী বলে গুণমণি মনে কি পড়েছে তোমার,” গায়িয়া গায়িয়া আপন মনে ফিরিতেছিল। গায়ক বালকের হৃদয়ে কত হর্ষ! কি উদ্দাম আনন্দ-উচ্ছাস! তুষানলদগ্ধ জীবন্মত আমি-আমি কি বুঝিব? হৃদয়ে যে নরকাগ্নির স্থাপনা করিয়াছি, তাহা আজীবন ভোগ করিতে হইবে। যেদিকে দৃষ্টিপাত করি, সকলই যেন হাস্যপ্রফুল্ল-উৎফুল্ল চন্দ্র, উৎফুল্ল নক্ষত্রমালা, উৎফুল্ল সমীরণ, উৎফুল্ল আম্রশাখাসীন পাপিয়ার ঝঙ্কৃত মধুর কণ্ঠ, উৎফুল্ল আলোকাম্বরা শোভনা প্রকৃতির চারুমুখ। কেবল আমি -শান্তিশূন্য - আশাশূন্য-কর্ত্তব্যচ্যুত-উদ্দেশ্যহীন কোন দূরদৃষ্ট পথের একমাত্র নিঃসঙ্গ যাত্রী।

  বাটীর সম্মুখ-দ্বারেই নরেন্দ্রের সহিত আমার দেখা হইল। তখন সে ডাক্তারের বাড়ী যাইতেছে; সুতরাং ত্যাহার সহিত বিশেষ কোন কথা হইল না।

  আমি বাটীর মধ্যে যাইয়া যে ঘরে নরেন্দ্রের মাতা ছিলেন, সেই ঘরের প্রবেশদ্বারে দাড়াইলাম। দেখিলাম, রোগশয্যায় নরেন্দ্রের মাতা পড়িয়া আছেন। পাশ্বে বসিয়া একজন কঙ্কালসৰ্বস্ব স্ত্রীলোক তাহার মস্তকে ধীরে ধীরে হাত বুলাইয়া দিতেছে। প্রদীপের আলো আসিয়া সেই উপবিষ্ট স্ত্রীলোকের অধিলুলিতচিবুক, প্রকটগণ্ডাস্থি অরক্তাধর ম্রিয়মাণ মুখের একপার্শ্বে পড়িয়াছে। প্রথমে চিনিতে পারিলাম না। তাহার পর বুঝিলাম-এ সেই লীলা। আজ দুই বৎসরের পরে লীলাকে এই দেখিলাম। যাহা দেখিলাম, তাহা না দেখিলেই ভাল ছিল।

  লীলার সেই শরন্মেঘমুক্তচন্দ্রোপম স্মিত মুখমণ্ডল রৌদ্রক্লিষ্ট স্থল-পদ্মের ন্যায় একান্ত বিবর্ণ এবং একান্ত বিষণ্ণ। সেই লাবণ্যোজ্জ্বল দেহলতা নিদাঘসন্তপ্তকুসুমাবৎ শ্রীহীন। সেই ফুল্লেন্দীবরতুল্য স্নেহপ্রফুল্ল আকর্ণবিশ্রান্ত