[ ৯ ]
জাএথু জাম মরণ বিসঙ্কা
সো করউ রস রসাণেরে কংখা॥ ধ্রু॥
জে সচরাচর তিঅস ভমন্তি
তে অজরামর কিম্পি ন হোন্তি॥ ধ্রু॥
জামে কাম কি কামে জাম
সরহ ভণতি অচিন্ত সো ধাম॥ ধ্রু॥ (পত্রাঙ্ক ৩৮)
লোক মিথ্যা মিথ্যা আপনার মনে মনে ভব ও নির্ব্বাণ রচনা করিয়া আপনাকে বদ্ধ করিতেছে। আমরা কিন্তু অচিন্ত্য যোগী, আমরা জানি না, জন্ম-মরণ এবং ভব কিরূপ হয়। জন্মও যেমন, মরণও তেমনি, জীবন ও মরণে কিছুমাত্র বিশেষ নাই, এ ভবে যাহার জন্ম ও মরণের শঙ্কা আছে, সেই রস ও রসায়নের চেষ্টা করুক। যে সকল যোগীরা সমস্ত চরাচরে ও স্বর্গে ভ্রমণ করে, তাহারা অজর এবং অমর কিছুই হইতে পারে না। সরহ বলে,—জন্ম হইতে কর্ম্ম হয়, কি কর্ম্ম হইতে জন্ম হয়, সে কথা স্থির করা যোগীদিগের পক্ষে অচিন্তনীয়।
এশিয়াটিক সোসাইটির পুথিখানায় ৯৯৯০ নম্বরে তিনখানি তালপাতা আছে, উহাতে শান্তিদেবের জীবন-চরিত দেওয়া আছে। তালপাতাগুলি নেওয়ারী অক্ষরে লিখিত, অক্ষরের আকার দেখিয়া বোধ হয়, ইংরাজী ১৪ শতকে লেখা হইয়াছিল। শান্তিদেব একজন রাজার ছেলে। যে দেশের রাজা, সে দেশের নামটি পড়া যায় না। রাজার নাম মঞ্জুবর্ম্মা। তারানাথ বলেন,—শান্তিদেব সৌরাষ্ট্রের রাজার ছেলে। বেণ্ডল সাহেবও তাহাই বলিয়াছেন। এ কথা কিন্তু আমার ঠিক বলিয়া বোধ হয় না। কারণ পরে প্রকাশ হইবে। রাজা শান্তিদেবকে যুবরাজ করিবার ইচ্ছা করিলেন। শান্তিদেবের মা উহাকে বলিলেন,—তুমি যুবরাজ হও ও পরে রাজা হও, ক্রমেই পাপে ডুবিবে। তুমি যদি ভাল চাও, নিজের উন্নতি চাও, যে দেশে বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বেরা আছেন, সেই দেশে যাও। তুমি যদি মঞ্জুবজ্রের কাছে উপদেশ লইতে পার, তোমার ধর্ম্মে উন্নতি হইবে। এই কথা শুনিয়া শান্তি একটি সবুজ ঘোড়ায় চড়িয়া আপন দেশ ত্যাগ করিলেন। কয়েক দিন ধরিয়া তিনি ঘোড়ার উপরেই রহিলেন, আহার-নিদ্রা এক প্রকার বন্ধ হইয়া গেল। এক দিন একটি নিবিড় বনের মধ্যে একটি সুন্দরী বালিকা তাঁহার ঘোড়ার লাগাম ধরিল এবং তাঁহাকে নামিতে বলিল। সে তাঁহাকে ভাল জল খাইতে দিল এবং পাঁঠার মাংস খাওয়াইয়া দিল। পরিচয়ে জানা গেল, সে মেয়েটি মঞ্জুবজ্রসমাধির শিষ্যা। মঞ্জুবজ্রের নাম শুনিয়াই শান্তিদেব শিহরিয়া উঠিলেন; বলিলেন,—আমি উঁহারই নিকট উপদেশ লইতে আসিয়াছি। তখন উভয়ে মঞ্জুবজ্রের নিকট গেলেন। শান্তিদেব তাঁহার নিকট বার বৎসর রহিলেন এবং মঞ্জুশ্রী সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করিলেন। বার বৎসরের পর তাঁহার গুরু বলিলেন, তুমি মধ্যদেশে যাও। শান্তিদেব মধ্যদেশে গিয়া মগধের রাজার রাউত হইলেন। রাউত শব্দ এখন প্রচলিত নাই। পূর্ব্বে এ কথাটি বেশ চলিত ছিল, উহার অর্থ সেনাপতি। আমাদের দেশের গন্ধবেণেদের চারিটি আশ্রম আছে, তাহার মধ্যে একটি রাউত আশ্রম অর্থাৎ রাউতা-