পাতা:হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৯১৬).pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১১ ]

যদি বল, সুভূতি প্রভৃতি শিষ্যেরা উপদেশ দিয়াছেন যে সকল গ্রন্থে, তাহা কেমন করিয়া আর্ষ হইল? তাহা হইলে বলিতে হইবে যে, যুবরাজ আর্য্য মৈত্রেয় বলিয়া গিয়াছেন;—

যদর্থবদ্ধর্ম্মপদোপসংহিতং ত্রিধাতুসংক্লেশনির্বহণং বচঃ।
ভবে ভবেচ্ছান্তমনুশংসদর্শকং তদ্বৎ ক্রমার্ষং বিপরীতমন্যথা॥

অতএব আর্ষ গ্রন্থ হইতে পণ্ডিতগণ যাহা আকর্ষণ করিয়া লইয়াছেন, তাহাই অর্থার্ষ আর সুভূতি প্রভৃতির যে উপদেশ, তাহা আর্ষ, যেহেতু ভগবান্‌ তাহার অধিষ্ঠাতা। পণ্ডিতেরা বলিলেন,—আমরা আর্ষ অনেক শুনিয়াছি, তোমার কাছে কিছু অর্থার্ষ শুনিব।

 ইতিপূর্ব্বেই শান্তিদেব বোধিচর্য্যাবতার, শিক্ষা-সমুচ্চয় ও সূত্র-সমুচ্চয় নামে তিনখানি অর্থার্ষ গ্রন্থ লিখিয়াছিলেন। তিনি কিয়ৎক্ষণ ধ্যান করিতে পাগিলেন, শেষ বোধিচর্য্যাবতার পাঠ করিতে লাগিলেন। প্রথম হইতেই পাঠ আরম্ভ হইল, বোধিচর্য্যার ভাষা অতি সুললিত, যেন বীণার সুরে বাঁধা, ভাব অতি গম্ভীর, সংক্ষিপ্ত ও মধুর। পণ্ডিতেরা স্তব্ধ হইয়া শুনিতে লাগিলেন। ছেলেরা মনে করিয়াছিল, লোকটাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিবে, তাহারা ভক্তিতে আপ্লুত হইয়। উঠল। ক্রমে যখন পাঠ জমিতে লাগিল, যখন মহাযানের গূঢ় তত্ত্ব ব্যাখ্যা হইতে লাগিল, যখন শান্তি মধুরস্বরে—

যদা ন ভাবো নাভাবো মতেঃ সন্তিষ্ঠতে পুরঃ।
তদান্যগত্যভাবেন নিরালম্বঃ প্রশাম্যতি॥

ঐ শ্লোক বাখ্যা করিতেছেন, হঠাৎ স্বর্গের দ্বার উন্মুক্ত হইয়া গেল, আর উজ্জ্বলবর্ণ বিমানে চড়িয়া, শরীর-প্রভায় দিগন্ত আলোকিত করিয়া মঞ্জুশ্রী নামিতে লাগিলেন। ব্যাখ্যা শেষ হইল, তিনি শান্তিদেবকে গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া বিমানে তুলিয়া স্বর্গে লইয়া গেলেন। পরদিন পণ্ডিতেরা তাঁহার কুটিতে গিয়া বোধিচর্য্যাবতার, শিক্ষা-সমুচ্চয় ও সূত্র-সমুচ্চয় তিনখানি পুথি পাইলেন ও তাহা প্রচার করিয়া দিলেন। এই তিনখানির দুইখানি পাওয়া গিয়াছে, কেবল সূত্র-সমুচ্চয় পাওয়া যায় নাই। যে দুইখানি পাওয়া গিয়াছে, তাহা ছাপানও হইয়াছে। শান্তিদেব ও ভুসুকু যে এক ব্যক্তি, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। পূর্ব্বে যেমন সরহপাদের কতকগুলি গান দিয়াছি, সেইরূপ ভুসুকুপাদেরও কতকগুলি গান আছে। গানের ভুসুকু ও শান্তিদেব এক কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ। কারণ, গানগুলি সহজযানের ও পুথিগুলি মহাযানের। কিন্তু শিক্ষা-সমুচ্চয়ের ভূমিকায় বেণ্ডল সাহেব বলিয়াছেন যে, এ পুস্তকে তান্ত্রিক মতের কথা আছে। কিন্তু সে অতি অল্প। এশিয়াটিক সোসাইটির পুথিখানায় ৪৮০১ নম্বরের যে পুথি আছে, তাহাও ভুসুকুপাদের লেখা। এই পুথিখানি সম্পূর্ণ নহে, সাতটি মাত্র পাতা, কিন্তু এখানা পুরামাত্রায় সহজযানের পুথি। ইহাতে সহজিয়াদিগের কুটি-নির্ম্মাণ, ভোজন-বিধি, শয়ন-বিধি প্রভৃতি নানা বিধি আছে। ইহাতে মদ খাওয়া ও তাহার আনুষঙ্গিক ব্যাপারেরও ত্রুটি নাই। ইহাতেও বাঙ্গালা ছড়া আছে, এই পুথির অক্ষরও খুব প্রাচীন। ইহা হইতে একটি বাঙ্গালা শ্লোক উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি—