[ ৬ ]
কতকগুলি প্রাকৃত বহি লইয়া একখানি ব্যাকরণ লিখিয়াছেন এবং যাহার সহিত মিলিবে না, তাহাকে অপভ্রংশ বলিয়াছেন। এইরূপে যে কত অপভ্রংশ ভাষা হইয়াছে, তাহা বলিতে পারা যায় না। তাই রাগ করিয়া বুঁদির রাজার চারণ সুরজমল বলিয়া দিয়াছেন, যে ভাষায় বেশী বিভক্তি নাই, সেই অপভ্রংশ। ভারতবর্ষে অধিকাংশ চলিত ভাষায় বিভক্তি নাই, তারা সবই অপভ্রংশ। প্রফেসর বেণ্ডল এই নূতন ভাষাকে অপভ্রংশ বলিয়াছেন বলিয়াই আমরা এত কথা বলিলাম। আমার বিশ্বাস, যাঁরা এই ভাষা লিখিয়াছেন, তাঁরা বাঙ্গালা ও তন্নিকটবর্ত্তী দেশের লোক। অনেকে যে বাঙ্গালী ছিলেন, তাহার প্রমাণও পাওয়া গিয়াছে। যদিও অনেকের ভাষায় একটু একটু ব্যাকরণের প্রভেদ আছে, তথাপি সমস্তই বাঙ্গালা বলিয়া বোধ হয়। এ সকল গ্রন্থ তিব্বতীয় ভাষায় তর্জ্জমা হইয়াছিল এবং সে তর্জমা তেঙ্গুরে আছে। প্রফেসর বেণ্ডল দুই চারি জায়গায় ঐ তর্জ্জমা ব্যবহার করিয়াছেন। ইংরাজী ৭ হইতে ১৩ শতের মধ্যে তিব্বতীরা সংস্কৃত বহি খুব তর্জ্জমা করিত, শুদ্ধ সংস্কৃত কেন, ভারতবর্ষের সকল ভাষার বহি তর্জ্জমা করিত, অনেক সময়ে তাহারা তর্জ্জমার তারিখ পর্য্যন্ত লিখিয়া রাখিয়াছে। তাহা হইলে এই বাঙ্গালা বহিগুলি ৭ শত হইতে ১৩ শতের মধ্যে লেখা হইয়াছিল ও তর্জ্জমা হইয়াছিল। খ্রীষ্টীয় ৮।৯।১০।১১।১২ শতে এই সকল বহিগুলি লেখা হইয়াছিল বলা যায়। প্রফেসর বেণ্ডল কয়েকটি দোঁহা মাত্র পাইয়াছিলেন, আমি দুইখানি দোঁহাকোষ পাইয়াছি, একখানিতে তেত্রিশটি দোঁহা আছে, আর একখানিতে প্রায় এক শতটি আছে। শেষোক্ত দোঁহাখানির সর্ব্বত্র মূল নাই। টীকার মধ্যে অনেক স্থলে পুরা দোঁহাটি ধরিয়া দেওয়া আছে, অনেক স্থলে কেবল আদ্যক্ষর ধরিয়া দেওয়া আছে। তবে ১০০ এক শতের অধিক হইবে ত কম হইবে না। দোঁহাগুলিতে গুরুর উপর ভক্তি করিতে বড়ই উপদেশ দেয়। ধর্ম্মের সূক্ষ্ম উপদেশ গুরুর মুখ হইতে শুনিতে হইবে, পুস্তক পড়িয়া কিছু হইবে না। একটি দোঁহায় বলিয়াছে,—গুরু বুদ্ধের অপেক্ষাও বড়। গুরু যাহা বলিবেন, বিচার না করিয়া তাহা তৎক্ষণাৎ করিতে হইবে। সরোরুহপাদের দোঁহাকোষে এবং অদ্বয়বজ্রের টীকায় ষড়্দর্শনের খণ্ডন আছে। সেই ষড়্দর্শন কি কি? ব্রহ্ম, ঈশ্বর, অর্হৎ, বৌদ্ধ, লোকায়ত ও সাঙ্খ্য। জাতিভেদের উপর গ্রন্থকারের বড় রাগ। তিনি বলেন,—ব্রাহ্মণ ব্রহ্মার মুখ হইতে হইয়াছিল; যখন হইয়াছিল, তখন হইয়াছিল, এখন ত অন্যেও যেরূপে হয়, ব্রাহ্মণও সেইরূপে হয়, তবে আর ব্রাহ্মণত্ব রহিল কি করিয়া? যদি বল, সংস্কারে ব্রাহ্মণ হয়, চণ্ডালকে সংস্কার দাও, সে ব্রাহ্মণ হোক্; যদি বল, বেদ পড়িলে ব্রাহ্মণ হয়, তারাও পড়ুক। আর তারা পড়েও ত, ব্যাকরণের মধ্যে ত বেদের শব্দ আছে! আর আগুনে ঘি দিলে যদি মুক্তি হয়, তাহা হইলে অন্য লোকে দিক না। হোম করিলে মুক্তি যত হোক না হোক, ধোঁয়ায় চক্ষের পীড়া হয়, এই মাত্র। তাহারা ব্রহ্মজ্ঞান ব্রহ্মজ্ঞান বলে। প্রথম তাহাদের অথর্ব্ববেদের সত্তাই নাই, আর অন্য তিন বেদের পাঠও