পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
হারানাে খাতা।

 “কিন্তু সুষো! দুটো জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য জিনিষটা কি একেবারেই তুচ্ছ করবার? এ বিয়েতে আমরা দুজনেই কত সুখী হতেম সেটাও ভেবে দেখ।”

 সুষমা হয়ত এই কথাটাই তখন ভাবিতেছিল। তাই সঙ্গে সঙ্গেই সে ইহার জবাব দিল,—“এ বিয়েতে আপনাকে স্বজনের কাছে তুচ্ছ হয়ে যেতে হবে, সমাজে হেয় হতে হবে,আর তা ছাড়া সবচেয়ে বড় যা’ তাতো আগেই বলেছি। এ অবস্থায় সে সত্যকার ভালবাসে, সে কি কখন সুখী হতে পারে?—না মরে যায়? কেমন করে জানলেন যে দুজনেই সুখী হবে?”

 “তাহলে কি তোমায় চিরদিন এই অমর্য্যাদার মধ্যে ফেলে রেখে দেওয়াই আমার কর্ত্তব্য বলে তুমি স্থির করচো?”

 ‘আমার জন্মই যে এই অমর্য্যাদার মধ্য দিয়ে, আপনি কি তা এত করেই বদল করতে পারলেন —যে আরও আশা করচেন? লাভে হতে এখন যেটাকে ‘পুরুষোচিত দুর্ব্বলতা’ বলে লোকে আপনাকে করুণার সঙ্গে মাপ করে চলে, তখন তা করবে না। আর আমি? আমি লোকের চোখে যেমন আছি তাই থাকবো। শুধু তারা ঘৃণার সঙ্গে এই কথাই বলে আমার সান্নিধ্য ছেড়ে সরে যাবে যে ওটা এতদিন রাজা নরেশ্চন্দ্রের নরেশ্চন্দ্রের—” যে লজ্জাকর শব্দটা মুখ দিয়া উচ্চারিত হইতেছিল না, তাহার দুশ্চেষ্ট অধ্যবসায় হইতে উহাকে মুক্তি দিয়া নরেশ্চন্দ্র উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, “তোমার কথাই হয়ত ঠিক।”

 সুষমা মুখ তুলিয়া বলিল, “আর একটা ভিক্ষা চাইবো?”

 নরেশ শুধু ম্লানমুখে চাহিয়া রহিলেন, কোন প্রশ্ন করিলেন না।

 সুষমা কহিল, “আপনাকে খুব শীঘ্র বিয়ে করতে হবে। আর যত দিন না আপনি আপনার সেই স্ত্রীকে ভালবাসতে পারবেন, ততদিন আমায় দেখা দেবেন না।”