পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১১৩

হইয়া উঠিল। কদাচ পকেটে ষ্টেথিস্‌কোপ রাখিয়া কোন ডাক্তারবিশেষ কোন রোগীর জন্য আহুত হইয়া ছুটন্ত মটরে বসিয়া আছেন দেখা গেল।

 বড় বড় সাহেবী হোটেলের ও দেশী বিদেশী থিয়েটার বাড়ীগুলার সাম্‌নে গাড়ী মোটর কতকগুলা করিয়া তখনও জমিয়া আছে। উর্দ্দিপরা আর্দ্দালীরা সোফারের পাশে বসিয়া তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছে। মুনীবদের দল আহার অথবা বিহারে মত্ত, তাঁদের কাছে রাত্রির খবর পৌঁছিতেছে না; দুরবস্থার একশেষ এই গরীব ভৃত্যের জাতির। তাদের রাত নির্জ্জন পথের ধারেই পোহাইবার উপক্রম করিতেছিল।

 আরও এক জায়গায় কিছু আলো, কিছু শব্দ পাওয়া যাইতেছিল। একটু বড় রকম বাড়ীর সামনে সামনে এক আধখান গাড়ী মোটও দাঁড়াইয়াছিল। সেগুলা ইংরাজ বাঙ্গালী মাড়ওয়ারি ভাটিয়া সকল জাতির।

 গঙ্গাতীরে এখন কল কারখানা ও ষ্টীমার ষ্টীমলঞ্চের ঝক্‌ঝকানি ফোঁসফোসানি সব, নিস্তব্ধ হইয়া গিয়াছে। দুই তীরের বড় বড় আফিস বাড়ীর জানালা দরজা সব বন্ধ, নিরালোক এবং স্তব্ধ। সারাদিনের কঠোর শ্রমের পর যেন প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড দৈত্যগুলা তাদের বিপুল দেহগুলাকে যেখানে সেখানে মেলিয়া দিয়া ঘুমে এলাইয়া পড়িয়া আছে। কে জানে কখন বাঁশীর উর্দ্ধস্বরে সারা সহরকে চকিত করিয়া দিয়া জাগ্রত হইবে।

 নিরঞ্জন এই সমস্ত দীর্ঘ পথ নীরবে অতিবাহিত করিয়া আসিল। এক পাশে বিপুলায়তন গড়ের মাঠ, হীরক ও মরকত মণির মালা গলায় দিয়া ঘুমাইয়া আছে। ‘অপ্সরজাতীয়’ নরনারীর রূপের আলো, পোষাকের চমক সেখানে আর ছিল না। ‘ইংরাজের স্বর্গোদ্যান’ স্তব্ধ স্থির। ‘কিন্নরের’, কণ্ঠরব আর তথা হইতে শ্রুত হইতেছিল না।