পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১১৯

“তুমিও খুব বিপন্ন হয়েছিলে বল্লে না? তোমার কথার ভাবে বোধ হলো আজও তোমার সে বিপদের মেঘ সম্পূর্ণ কাটেনি। কিন্তু তুমি তো বেশ শান্তভাবেই সব কথা বল্‌চো,—সংসারকে শ্মশানের পরিবর্ত্তে আনন্দ-কানন বলেও উল্লেখ করতে তোমার বাধছে না! আমি যে তা ভাবতেও পারিনে।”

 সুষমা বলিল, “দেখুন, আনন্দ তো বাইরে পাবার জিনিষ নয়, আর কুড়িয়ে বেড়াবারও বস্তু নয়। ওটাকে নেই নেই ভাবতে ভাবতে ওটা একেবারেই মরীচিকা হয়ে মিলিয়ে যায়। আর আছে আছে জপ করতে করতে নিজের মনের মধ্য থেকে সে সহস্রদলে বিকশিত হয়ে ওঠে। আমার সাধুজী আমায় এই বকম করেই ভাবতে শিখিয়েছিলেন। আহা, আবার যদি আমি তাঁকে ফিরিয়ে পেতুম! সংসারে কতই যে শেখবার রয়েছে। কিছুই তো শিখতে পেলুম না। ছার মেয়ে হয়ে জন্মেছিলুম, তাও আবার একবারেই অধমের চেয়েও অধম হয়ে!”—

 ভোর না হইতেই কলিকাতা মহানগরীর নিদ্রা ভঙ্গ সাড়ম্বরেই আরম্ভ হইয়া গিয়াছিল। লোকজন গাড়ী ঘোড়া মটর রিক্‌সা হু হু করিয়া ছুটিয়া চলিতেছে। এখানে ঝাড়ুদার রাস্তা ঝাঁটাইতেছে, ওখানে আবর্জ্জনার স্তূপ বোঝাই হইতেছে। দোকান ঘরের দরজা জানালা খটাখট খোলা হইতেছে, গঙ্গাস্নানের যাত্রীরা আসা যাওয়া করিতেছে। রাতভিখারীরা ঘরের পানে এবং ভোরের কীর্ত্তন গাহিয়া বৈরাগী বৈষ্ণব বা বাউলেরা ফুটপাথের উপর চলাচল করিতেছিল। ফলের ঝুড়ি, মাছের বাজরা মাথায় লইয়া ও দুধের ভার কাঁধে বহিয়া মুটেরা বাজারের দিকে চলিয়াছে। নিরঞ্জনকে এত ভোরে বাড়ী ঢুকিতে দেখিয়া রাজবাড়ীর দ্বারবানেরা কিছুই বিস্ময় বোধ করিল না। এ বাড়ীর সবাই জানে সে পাগল।