পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১২৯

একটা মস্ত বড় অভাব রহিয়াছে। সবার মনেই কিছু এত বড় বৈরাগ্য জাগিবে না যে, কাশীবাসিনী হইয়া ভিক্ষার ঝুলি তুলিয়া লইতে পারিবে।

 তা’হলে আমার পথ কি? আপনি যদি অনুমতি করেন, আমি নিজেই একবার সে পথটা খুঁজিয়া দেখি? প্রথমে বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়া দেখি যদি ভদ্র পরিবারে কর্ম্ম পাই, অন্যত্র চেষ্টা আমি করিব না। আমার মত অপবিত্রার পক্ষে নিতান্ত স্পর্ধা হইলেও চিরদিনই আমার বড় লোভ হয় যে উঁহাদের পবিত্র সঙ্গে নিজের এই শূন্য নিরালম্ব জীবনটাকে আমার একটুখানিও আমি পবিত্র করিয়া লই। মিশনরী মেমরা ও তাদের আয়ার যেটুকু পায়, জানি না সেটুকু পাওয়ার যোগ্যতা আমার মত হীনজনের আছে কি না?—কিন্তু একবার পরীক্ষা করিয়া দেখিতে দোষ কি? বলুন, অনুমতি দিন, আদেশ করুন,— ভাগ্য পরীক্ষা করিয়া দেখি? চরণে কোটি কোটি ভক্তিপূর্ণ প্রণতি।

আপনার সেবিকাধন্যা 
সুষমা দাসী। 

 নরেশের মনের মধ্যে এই মিনতি ও বেদনাভরা আবেদন খানির প্রতি পংক্তিটী যেন বিছার কামড় মারিতেছিল। মানুষের ভাগ্যনিয়ন্তার প্রতি একবার অভিমান হইল, অমন একটি জীবনকে কেন তিনি এমন ব্যর্থ করিবার জন্য অস্থানে পাঠাইলেন!—নিজের অক্ষমতার পরেও রাগ ধরিল; সে যদি উহার রক্ষাভারই গ্রহণ করিয়াছিল, তবে তাহার যশ অকলঙ্কিত রাখিতে পারিল না কেন? লোক চক্ষে তাহার মর্য্যাদাকে এমন নির্দ্দয়ভাবে, ক্ষুণ্ণ হইতে দেওয়া তাহার একেবারেই উচিত হয় নাই এবং পরিশেষে সেই অসহায় বালিকাকে তাহার বন্দীগৃহে একাকিনী দুর্ব্বহ জীবন বহনে বাধ্য করিয়া নিজে