পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অষ্টম পরিচ্ছেদ

তবে পরণে ভালবাসা কেন গো দিলে, রূপ না দিলে যদি বিধি হে!
পূজার তরে হিয়া, উঠে যে উথলিয়া, পূজিব তারে গিয়া কি দিয়ে?

—মানসী

 বিবাহিত জীবনের এই কয়টা বৎসরে স্বামীর যে পরিচয় পরিমল পাইয়াছিল, তাহাতে তাঁহার চরিত্রে আর যতই যা থাক একটা প্রচণ্ড জিদ যে ছিল ইহা নিঃসন্দেহ রূপেই সে জানিয়াছে। স্বামী তাহার সদানন্দ ভোলানাথ কিন্তু একটুখানি অবাধ্যতায় আবার তাঁর সেই সদাশিব রুদ্ররূপে পরিবর্ত্তিত হইয়া দাঁড়াইতে দেখা যায়। স্বামীর অসঙ্গত খামখেয়ালীর কথা মনে করিয়া পরিমলের মনটা অত্যন্ত উত্যক্ত হইয়া উঠিল। তাহার মন বিদ্রোহ করিয়া বলিল, মানুষের সকল ইচ্ছা ও সকল কাজের উপর দখল নওয়া এ যে বিষম অত্যাচার! উচিতের দিক্ দিয়া যতই দাবী করা যাক্ না কেন, মানুষ নিজেকে কোন অবস্থাতেই এমন ব্যক্তিত্বহীন করিয়া ফেলিতে সমর্থ হয় না যে, আর একজনের প্রত্যেক খুঁটিনাটীর সকল আদেশকেই সে তার নিজের করিয়া লইতে পারে। অন্ততঃ হাসিমুখে যে পারে না, সেটা সে নিজেকে দিয়াই বুঝিত। নতুবা জুলুমের ভয়ে ক্ষুদ্রের ক্ষুদ্র ইচ্ছাকে প্রবল পক্ষের প্রচণ্ড ইচ্ছাস্রোতে মগ্ন করা, সে ত সংসারশুদ্ধ লোকে বাধ্য হইয়াই করিতেছে। পরিমল রাগ করিয়া অনেকক্ষণ বিছানার বালিশে মুখ গুঁজিয়া কাঁদিল। অভিমান করিয়া মনে মনে আহত হইয়া ভাবিল, লোকে যে বলে সমানে সমানে না পড়লে কোন পক্ষেরই ঠিক মান থাকে না, তা ঠিকই। আমি গরীব অনাথা বলেই আমার উপর উনি সকল তা’তেই জবরদস্তি চালান। হতুম আমি