পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা
৫৭

 রাগের মাথায় সে নরেশচন্দ্রের উদ্ভট দারিদ্র্য-প্রেমকে মনে মনে যৎপরোনাস্তি অপভাষা প্রয়োগ করিল। এমন কি অন্নদা দাসী, তাহার চুল বাঁধা যে তখনও সমাধা হয়ে উঠে নাই—এই বিস্মৃত সংবাদটা জানাইতে আসিলে, তাহারই সহিত সে এ বিষয়ে আলাপ করিতে বসিয়া জোর করিয়া বলিল “তাবলে কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি রকমের ‘ভাল’ হওয়া ও মানুষের পক্ষে ভাল নয়। যা’ রয় সয় সকল বিষয়ে সেই মতন চলাই সঙ্গত। গরীবকে দয়া দেখাতে হবে বলেই কি তাকে সিংহাসনে বসিয়ে পূজো করতে হবে নাকি?”

 অন্নদার সহিত যে তাহার মনিব-পত্নীর মতের এমন সামঞ্জস্যও আছে, ঘুণাক্ষরেও এ সংবাদটা জানা থাকিলে আর সে বেচারা ইহার সম্বন্ধে বোধ করি পড়সীর বাড়ী বাড়ী গিয়া অনর্থক দশকথা প্রচার না করিয়া বেড়াইয়া তাহার সহিতই উহাদের সম্বন্ধীয় দু’চারিটা মুখরোচক আলোচনা ঘরে বসিয়াই সে চালাইতে পারিত। পরম উৎসাহিত হইয়া উঠিয়া সে হাতমুখ নাড়িয়া মনিব-গৃহিণীর স্বপক্ষ সম্পূর্ণ সমর্থনপুর্ব্বক সোৎসাহে কহিয়া উঠিল, “ও মা, তা’ আর বল্‌তে রাণীমা! রাজাবাবুর আমাদের পছন্দর ছিরিই যদি থাক্‌বে তা’হলে আর আমাদের ভাবনাটাই বা কি? এই দেখ না কত কত রাজা জমিদার হেঁটে হেঁটে তাদের পায়ের বাঁধন ছিড়ে ফেল্‌লে, তা তাদের পরী পরী সব মেয়ে ফেলে উনি কিনা কোন পাড়া’গাঁর মরুকগে, মুখে আগুন লাগুক আমার! ওমা কি, কথা বল তে কি বলি দেখ একবার! এই জন্যই বলে গো, বুড়ো হলে বাহাত্তুরে ধরে যায়। কিছু মনে নিওনা মা! কার সাম্‌নে যে কি কথা হচ্ছে, তোমার দিব্যি মা; এক্কেবারে নিজ্যুস্ ভুলে গেছি। ন্যাও বাছা! এখন চুলটো ফিরিয়ে ন্যাওসে, অবলার মা আট্‌কে রয়েছে, তাকে আবার পাঁচ বাড়ী তো ঘুরতে হবে।”