পাতা:হে অরণ্য কথা কও - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কও গতি নৃত্যপরায়ণা বন্য নদীর নাম আর কি ক’রে হবে! এই একমাত্র লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে আবার নাচতে নাচতে ঢুকে পড়লো বোনাই ষ্টেটের আরণ্য ভূমিতে। তাই এই নাম। বেলা বারটা। আমরা ফিরলুম, চমৎকার শান্ত গ্ৰামখানি। এই ঘন বনের মধ্যে এর জন্ম ও মরণ। বিসরার বাজার থেকে চিনি, আন্টু, তেল আনে। বিসর ষোল মাইল দূৱ এখান থেকে। মহুয়ার তেল খায়, ও নাকি ঘি’র মত, স্যামুয়েল মানকি বল্লে। খ্ৰীষ্টান হয়েচে বটে। কিন্তু অসুখ হোলে বনে গিয়ে লুকিয়ে বোংগা পূজো করে। ফিরে এলুম বনের পথ দিয়ে। স্নান করে খেয়েই তখুনি আবার মোটরে বার হই টোয়েবু নামে একটি নিবিড় বনে অবস্থিত জলপ্রপাত দেখতে । তিৱিলপোসি বাংলা থেকে থলকোবাদের পথে চার মাইল গিয়ে গাড়ী রেখে হেঁটে চলম বনের মধ্যে। সঙ্গে ফরেষ্টার খুন্টিয়া, দুজন ফরেষ্ট গার্ড, মিঃ সিংহ। বনে অত্যন্ত আগাছা, বিশেষতঃ সেদিনকার সেই ওকড়া জাতীয় ফল। ক্রমশঃ নিবিড় থেকে নিবিড়তর বনে ঢুকে গেলুম। এমন বনের চেহারা এই সারাণ্ডাতেও আর দেখিনি। কিন্তু অদ্ভুত সৌন্দৰ্য্য সে ঘোর বনের। বিশাল বনস্পতি শীর্ষে কমপ্ৰিটাম ডিকেনড্রামের সাদা পাতা গজিয়ে ঠিক ফুলের মত দেখাচ্চে, এ লতা যে অতি উচুতে উঠতে পারে তা জানতাম না। একস্থানে সুড়ি পথের দুধারে নদী কঁঠান নামক এদেশী গাছের জঙ্গল, বড় বড় আমগাছ, শালগাছ, মোটা মোটা লতা ডালে পালায় জড়িয়ে দুৰ্ভেদ্য ও দুইপ্ৰবেশ্য করে রেখেচে বনভূমি । ভয় হয় এ বনে ঢুকতে, বিশেষত যে রকম হাতী আর বাঘের ভয় বনে। এক এক স্থানে সুড়ি পথটুকু ছাড়া ডাইনে বঁায়ে কিছুই দেখা যায় না। চলেচি, পথ আর ফুরোয় না। ওকড়া জাতীয় শুকনো ফল সারা গা এমন কি মাথায় চুলে পৰ্যন্ত আটকে যাচ্চে। ዓ¢