মাতা শাশুড়ীর আদেশে পুল্রকামা হইয়া তাঁহার সেবা করেন। মিহির সেবায় তুষ্ট হইয়া পুল্রবর দিয়া চলিয়া যান। যথাকালে ডাক ভূমিষ্ঠ হন। প্রবাদ এই, ডাক জন্মিয়াই মাতাকে ডাক দিয়া নবপ্রসূতি ও সদ্যঃপ্রসূত সন্তানের লালন-পালন সম্বন্ধে উপদেশ করেন—এই নিমিত্ত তাঁহার নাম 'ডাক' হয়।
"উপজিয়ে মায়কো দিলে ডাক।
সেই সে কারণে তার নাম থৈলা ডাক॥"
মিহির আর একবার লোহিডাঙ্গরা গ্রামে আগমন করেন এবং ডাকের অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় পাইয়া পরম প্রীত হন। প্রবাদ এই যে, ডাক অল্প বয়সেই জলে ডুবিয়া মারা যান। ডাকের বচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আছে:—নীতি-প্রকরণ, রন্ধন-প্রকরণ, জ্যোতিষ-প্রকরণ, ক্ষেত্র-প্রকরণ, গৃহিণী-লক্ষণ, কৃষি-লক্ষণ, বৃষ-লক্ষণ, বর্ষা-লক্ষণ, পরিত্যাগ-কথন।
আসাম-প্রচলিত ডাকের জন্ম-সম্বন্ধীয় প্রবাদগুলি কতদূর বিশ্বাসযোগ্য তৎসম্বন্ধে আলোচনা করা উচিত। জ্যোতিষ-সম্বন্ধে কৃতিত্বের নিমিত্ত ডাককে বরাহমিহিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করিয়া জনসাধারণের প্রবাদ রচনা করা আশ্চর্য্য নহে। খনার সম্বন্ধেও সেইরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে। প্রধান শিবভক্তকে শঙ্করের অবতার, কৃষ্ণভক্তকে চৈতন্যের অবতার প্রতিপন্ন করিয়া বহু কাহিনী এদেশে রচিত হইয়াছে। জ্যোতিষ সম্বন্ধেও ডাককে সেইরূপ বরাহমিহিরের অবতার কল্পনা করা অসম্ভব নহে। আসামী ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস লেখক শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ বেজবড়ুয়া এই সমস্ত উপাখ্যান নির্ব্বিচারে বিশ্বাস করিয়া বরাহমিহিরের সময়ানুসারে ডাকের সময়ও খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। বরাহমিহিরের সময় সম্বন্ধে বিস্তর মতভেদ আছে। জ্যোতির্ব্বিদাভরণের সময়নির্দ্দেশ অনুসারে তিনি ২৪ বিক্রম-সম্বতে বিদ্যমান ছিলেন। পৃথুস্বামিকৃত ব্রহ্মগুপ্তের টীকায় লিখিত আছে ৫০৯ শকে বরাহমিহির স্বর্গারোহণ করিয়াছেন। হলমঞ্জরীতে বরাহমিহিরের সময় দ্বিতীয় বিক্রম-সম্বৎ বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। কিন্তু বরাহমিহির স্বয়ং তাঁহার বৃহজ্জাতকে যে সময় নির্দ্দেশ করিয়াছেন আমরা তাহাই গ্রাহ মনে করি। ৪২৭ শকের শুক্ল প্রতিপদ মঙ্গলবার ধরিয়া তিনি অহর্গণ স্থির করিয়াছেন। ইহাই সম্ভবতঃ তাঁহার বৃহজ্জাতক রচনার সময়। অতএব উহা ৫০৫ খৃষ্টাব্দ হইল। ডাক যদি সত্য সত্যই ইহার বর-পুল্র হইয়া থাকেন, তবে তাঁহার সময় খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগ দাঁড়ায়। কিন্তু আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি,