পাতা:Vanga Sahitya Parichaya Part 1.djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌদ্ধযুগ—ডাক—খৃঃ ৮ম-১২শ শতাব্দী।

এই উপাখ্যান আমরা বিশেষ প্রমাণ ব্যতীত গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নহি। শাকদ্বীপি-ব্রাহ্মণগণের এক শাখার উপাধি মিহির ছিল। এই মিহির হইতে উদ্ভূত 'মির' ও 'মের' এই দুই উপাধিই এখনও তাঁহাদের মধ্যে প্রচলিত দেখা যায়। মিহির নামক জ্যোতির্ব্বিদ্‌ পাইলেই যে আমরা তাঁহাকে বরাহমিহির বলিয়া মনে করিব, তাহার কোন কারণ নাই। পরবর্ত্তী লোকেরা বরাহমিহির এবং এই উপাখ্যানোক্ত মিহিরকে অভিন্নব্যক্তি বলিয়া কল্পনা করিয়াছে; বিশেষ প্রমাণাভাবে তাহা কখনই গ্রাহ্য হইতে পারে না। বিশেষতঃ এই উপাখ্যানে ডাককে কুম্ভকার জাতীয় বলা হইয়াছে; অথচ বাঙ্গালায় প্রচলিত প্রবচনে অনেক স্থানে “ফুট ভাষে ডাক গোয়ালে” এই পদ দৃষ্ট হয়। নেপালে যে 'ডাকার্ণব তন্ত্র' ও 'বজ্রডাক তন্ত্র' প্রভৃতি তন্ত্র প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে এবং যাহাতে ডাকের বচনের অনুরূপ প্রবচনমালা উদ্ধৃত পাওয়া যায়, তাহা ডাকিনী তন্ত্রের মতই বজ্রডাক সম্প্রদায়ের রচিত বলিয়া মনে হয়। ডাক শব্দ ডাকিনী শব্দের পুংলিঙ্গ এবং ডাক ও ডাকিনী বৌদ্ধ তান্ত্রিকের শ্রেণীবিশেষ হওয়াই অধিক সম্ভবপর। ডাক যদি প্রকৃতই কোন ব্যক্তিবিশেষের নাম হইয়া থাকে, তবে তাঁহার জন্মস্থান বড়পেটা হওয়া আশ্চর্য্য নহে। প্রাচীন কালে জলপাইগুড়ী হইতে ব্রহ্মদেশের সীমান্ত পর্য্যন্ত বিস্তৃত জনপদ প্রাগ্‌জ্যোতিষপুরের অন্তর্গত ছিল, সুতরাং বর্ত্তমান বঙ্গদেশের অনেকাংশ প্রাগ্‌জ্যোতিষপুরের মধ্যবর্ত্ত ছিল। ডাকের বচন বাঙ্গালার ঘরে ঘরে প্রচলিত। পাল-রাজাদের সময় কামরূপ বঙ্গদেশেরই অন্তর্গত ছিল; পাল-রাজগণের প্রতিনিধি-রাজপুরুষের তাম্রশাসন ঐ দেশ হইতে পাওয়া গিয়াছে। এই কারণে ডাককে বঙ্গীয় মনীষিগণের মধ্যে গ্রহণ করায় কোন আপত্তি হইতে পারে না। চাঁদ সওদাগরের বাসস্থান বঙ্গদেশ এবং আসামের বহুসংখ্যক গ্রামে নির্দ্দিষ্ট হইতে আমরা দেখিতে পাই,—সেই সেই গ্রামে এখনও তৎসংক্রান্ত বহু প্রবাদ প্রচলিত আছে। ডাকের জন্মভূমি-সংক্রান্ত প্রবাদ সেইরূপ কল্পনা-মূলক কিনা তাহা বলা যায় না, কিন্তু যখন ডাকের জন্মস্থান বলিয়া অপর কোন গ্রাম এখনও দাবী করে নাই, তখন লোহগ্রামকে সেই গৌরব দিতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু এতদ্দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তদ্রূপ অন্যান্য কি কি কাহিনী প্রচলিত আছে তাহা না জানা পর্য্যন্ত আমরা নিঃসংশয় হইতে পারি নাই। বরাহমিহিরের উপাখ্যান সম্বন্ধে আমাদের আপত্তি আছে। ভাষার নমুনা দেখিয়া ডাক ও খনার বচনকে আমরা খৃষ্টীয় ৮ম-১২শ শতাব্দীর রচনা বলিয়া মনে করিয়াছি। (বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, ৩য় সং, ৭৮-৮৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। এই মত পরিবর্ত্তন