পাতা:Vanga Sahitya Parichaya Part 1.djvu/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌদ্ধযুগ—খনা—খৃঃ ৮ম-১২শ শতাব্দী।
১১

জন্মস্থান বঙ্গের যে কোন পল্লীতেই থাকুক না কেন, তিনি ও তাঁহার স্বামী মিহির যে এক সময়ে চন্দ্রকেতু রাজার আশ্রয়ে চন্দ্রপুর নামক স্থানে বহুদিন বাস করিয়াছিলেন, তৎসম্বন্ধে সন্দেহের বিশেষ কারণ নাই। এই চন্দ্রপুর গ্রাম এখন বিলুপ্ত-সংজ্ঞ হইয়া বৃহৎ ভগ্নাবশেষে পরিণত। বারাশত হইতে ৭ ক্রোশ পূর্ব্বে দেউলি নামক পল্লী বিদ্যমান আছে। এই গ্রাম রাজা চন্দ্রকেতুর গড়ের মধ্যেই অবস্থিত। এই স্থানে বহুদূর ব্যাপিয়া রাজা চন্দ্রকেতুর জাঙ্গাল দৃষ্ট হয়;—ইহাই পূর্ব্বে চন্দ্রপুর নামে অভিহিত ছিল। রাজ-নিকেতনের ভগ্নাবশেষ হইতে পশ্চিমে একটু দূরে ৩০।৩৫ হাত উচ্চ একটা মৃত্তিকা-স্তূপ দৃষ্ট হয়। এই স্থানে মিহির ও খনার আবাস-বাটী ছিল বলিয়া এতদ্দেশীয় সকলের ধারণা। খনা ও মিহির সম্বন্ধে নানারূপ উপাখ্যান ও প্রবাদ এই অঞ্চলে প্রচলিত আছে। চন্দ্রকেতুর গড়ে প্রাপ্ত তাম্রনির্ম্মিত বলয়ের দুই খণ্ড সম্প্রতি সাহিত্য-পরিষৎ-মন্দিরে রক্ষিত হইয়াছে। [সাহিত্য-পরিষৎ-পঞ্জিকা—১৩১৮ সন—১৪ পৃঃ দ্রষ্টব্য] ডাক ও খনার বচনে কৃষকদিগের সম্বন্ধে উপদেশই অধিক। বঙ্গীয় কৃষকদিগের এইগুলিই প্রাচীনতম ছড়া এবং ইহা তাহাদের নিজস্ব। আমরা উহাদিগকে সামসময়িক ও ৮০০—১২০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে রচিত বলিয়া অনুমান করিয়াছি[১]। কিন্তু আদি-যুগের ভাষার চিহ্ন এই সকল প্রবচনে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও মোটের উপরে যে ইহাদের ভাষা অনেকাংশে পরিবর্ত্তিত হইয়াছে, তাহাও আমরা পূর্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি। প্রাচীন রচনার চিহ্ন যে এই সব বচনে এখনও আছে, তাহার উদাহরণস্বরূপ নিম্নে দুটি অংশ উদ্ধৃত করিলাম।

[ ১ ]

“আষাঢ়ে কাড়ান নাম্‌কে।
শ্রাবণে কাড়ান ধান্‌কে॥
ভাদরে কাড়ান শীষকে।
আশ্বিন কাড়ান কিস্‌কে॥”

[ ২ ]

“আঘণে পৌটি।
পৌষে ছেউটি॥
মাঘে নাড়া।
ফাল্গুনে ফাঁড়া॥”

 এই ভাষা যে কতকটা দুর্ব্বোধ, তাহা অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে।

  1. বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, ৩য় সং, ৭৮—৮১ পৃঃ।