ময়ূরভঞ্জ হইতে প্রাপ্ত গোবিন্দচন্দ্রের গীত। পালবংশের গৌরবের অবসানে তাহদের কীর্ত্তিগায়ক যোগি-জাতি ভারতবর্ষের নানা দেশে যাইয়া বাস করেন। বঙ্গীয় যোগি-জাতির এক শাখা ময়ূরভঞ্জে বাস করিতেছেন। তাহারা এখনও বঙ্গীয় পালনরপতিগণের গান গাইয়া থাকেন। তাহদের নিকট প্রাপ্ত ২০০ বৎসরের একখানি প্রাচীন পুথি হইতে এই গীতাংশ উদ্ধৃত করা হইল। স্বরচন্দ্র বোলি করি বঙ্গদেশে রায়। তারাচন্দ্র নামে হেলা তাহার তনয়॥ ইহার নন্দন শুন ব্রহ্মাচন্দ্র রায়। গোপীচন্দ্র নামে হেলা ইহারো তনয়॥ মেহুচন্দ্র নাম পুনি ইহারো কুমারো। বিষ্ণুচন্দ্র নামে পুত্র হইলা তাহারে। বিষ্ণুচন্দ্র নন্দন হইলা রূপচন্দ্র। ততছ উৎপত্তি হোএ গোবিন্দ যে চন্দ্র। (১) মহা প্রতাপী রাজা বলে বলিয়ারে। তিনি কোশ আয়তন কটক ইহারো। (২) তিনি পুর বাস্কুল সে পাথর পাচে চিরি। তিনি তাল গম্ভীর বিখাল খন খুলি। (৩) জগতী অটালি সে মধুপ নবর। উপরেণ খোয় ঢালি ভিতরে হিস্কুড়। চন্দ্রশালাপুর গঙ্গামন্দির উপমা। অষ্ট রক্তন মিশাই গড়িলা বিশ্বকর্ম্ম। (১) এই বংশাবলীর সঙ্গে বাঙ্গলাদেশে প্রচলিত গোবিন্দচন্দ্রের গানে প্রদত্ত বংশাবলীর ঐক্য নাই। (২) ইহার সৈন্তগণ তিন ক্রোশ ব্যাগিয়া অবস্থান করে। এই বিবরণ হইতে আমরা প্রসিদ্ধ গোবিন্দপালের ক্ষমতার কতকটা যথাযথ বর্ণনা পাইতেছি। বাঙ্গলায় প্রচলিত গোপীচন্দ্রের গানে তাহাকে ২২ দণ্ডের অধিপতি বলা হইয়াছে, তাহ নিতান্তই গ্রাম্য কবির অজ্ঞতার পরিচায়ক। (৩) পাথর চিরিয়া তিনটি পুরী নির্ম্মিত হইল। তিন তাল পরিমিত বিশাল খনা (গর্ত্ত) খুঁড়িল, অর্থাৎ জলাশয় প্রস্তুত করিল।
পাতা:Vanga Sahitya Parichaya Part 1.djvu/২০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।