মালসী-মঙ্গল। মনসার ভাসানের কথা যে কত প্রাচীন তাহা নির্ণয় করা দুরূহ। এই কথার আদি-স্থান বঙ্গদেশ কিংবা বিহার তাহ ঠিক জানি না। যদিও আসাম এবং বঙ্গদেশের বহু স্থানে চাদ সদাগর এবং মনসা-মঙ্গলের উল্লিখিত অপরাপর ব্যক্তিগণের কর্ম্মক্ষেত্র নির্দিষ্ট হইয়া থাকে, তথাপি প্রাচীন অঙ্গদেশের রাজধানী চম্পাই মনস-মঙ্গলের চম্পকনগরী কিনা, তাহাও একটি গুরুতর প্রশ্ন। যদি তাহ হয়, তবে বিহারই এই গীতির আদি-স্থান বলিয়া গণ্য হইবে। ভাগলপুর, পাটনা প্রভৃতি উত্তর-পশ্চিমের অনেক স্থানেই বেহুলা ও লক্ষ্মীন্ধরের গান প্রচলিত আছে এবং তদেশীয় বেদেরমণীগণও বেহুলা ও লক্ষ্মীন্ধরের ছড়া গাইয়া সৰ্প ক্রীড়া প্রদর্শন করিয়া থাকে। পাল-রাজাদের গানের দ্যায় মনসামঙ্গলের কথাও পশ্চিমোত্তর ভারতবর্ষের অনেক স্থলেই সুপরিচিত। মগধ কিংবা অপর কোন নিকটবর্তী রাজধানী হইতে এই গান হয়ত সমস্ত আর্য্যাবর্তে এক সময়ে প্রচলিত হইয়া পড়িয়াছিল। পাল-রাজাদের সময়েও মগধ আর্য্যাবর্তের কেন্দ্রস্থানীয় ছিল, সুতরাং এই প্রাচীন রাজধানীর আমোদ-উৎসব ও কবি-গাথা যে আর্য্যাবর্তের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অনুকৃত হইবে তাহা অনুমান করা অসঙ্গত নহে। দেখা যায়, মনসা-মঙ্গলের প্রাচীন কবি নারায়ণদেব মগধেই জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। র্তাহার কাব্যের একখানি প্রাচীন পুথিতে চাদ সদাগরের স্ত্রী সোনকাকে “বেহারিয়া রাজার কন্যা” বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। এই কাব্যের অপর প্রাচীন কবি বংশীবদন শর্ম্ম সোনকাকে পাটলীনগরের রাজকন্ত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন; সম্ভবতঃ এই পাটলীনগর পাটলীপুত্রের নামেরই সংক্ষেপ। প্রাচীন মনসামঙ্গল কাব্যে দৃষ্ট হয়—বিহার-প্রদেশের “বাছাই” নামক জনৈক রাজা সর্ব্বপ্রথম মনসাদেবীর ঘট স্থাপন করিয়া পূজা করেন। রাজা “বাছাই” হালুয়া অর্থাৎ হলবাহক জাতীয় ছিলেন। ইহার সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ বংশীদাস দিয়াছেন। এই মনসামঙ্গলের কথা যে হিন্দুপ্রভাবের পূর্ববর্ত্তা তাহাতে কোন সন্দেহই নাই। ইহাতে ব্রাহ্মণ বা কোন উচ্চ বর্ণের চরিত্র একরূপ নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। বণিক জাতির গৌরব প্রচারই প্রাসঙ্গিক ভাবে এই গীতির অন্ততর বিষয়। আমরা জানি, বৌদ্ধযুগেই বণিক্ জাতি এদেশে ধনে মানে উন্নত ছিলেন। ব্রাহ্মণ্য প্রভাবের পর তাহাদের অধঃপতন হইয়াছে। মনসা-মঙ্গল ও পাল-রাজাদের গানে
পাতা:Vanga Sahitya Parichaya Part 1.djvu/২৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।