পুনশ্চ/কীটের সংসার
কীটের সংসার
একদিকে কামিনীর ডালে
মাকড়ষা শিশিরের ঝালর দুলিয়েছে,
আর একদিকে বাগানে রাস্তার ধারে
লাল মাটির কণা-ছড়ানো
পিঁপ্ড়ের বাসা।
যাই আসি, তারি মাঝখান দিয়ে
সকালে বিকালে।
আনমনে দেখি, শিউলিগাছে কুঁড়ি ধরেচে
টগর গেছে ফুলে ছেয়ে।
বিশ্বের মাঝে মানুষের সংসারটুকু
দেখতে ছোটো, তবু ছোটো তো নয়।
তেমনি ঐ কীটের সংসার।
ভালো করে চোখে পড়ে না,
তবু সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে আছে ওরা।
কত যুগ থেকে অনেক ভাবনা ওদের,
অনেক সমস্যা, অনেক প্রয়োজন,—
অনেক দীর্ঘ ইতিহাস।
দিনের পর দিন রাতের পর রাত
চলেচে প্রাণশক্তির দুর্ব্বার আগ্রহ।
মাঝখান দিয়ে যাই আসি,
শব্দ শুনিনে ওদের চির-প্রবাহিত
চৈতন্যধারার,
ওদের ক্ষুধা পিপাসা জন্মমৃত্যুর।
গুন গুন সুরে আধখানা গানের
জোড় মেলাতে খুঁজে বেড়াই
বাকি আধখানা পদ,
এই অকারণ অদ্ভুত খোঁজের কোনো অর্থ নেই
ঐ মাকড়ষার বিশ্বচরাচরে,
ঐ পিঁপড়ে সমাজে।
ওদের নীরব নিখিলে এখনি উঠচে কি
স্পর্শে স্পর্শে সুর, ঘ্রাণে ঘ্রাণে সঙ্গীত,
মুখে মুখে অশ্রুত আলাপ,
চলায় চলায় অব্যক্ত বেদনা।
আমি মানুষ,
মনে জানি সমস্ত জগতে আমার প্রবেশ,
গ্রহনক্ষত্রে ধূমকেতুতে
আমার বাধা যায় খুলে খুলে।
কিন্তু ঐ মাকড়ষার জগৎ বদ্ধ রইল চিরকাল
আমার কাছে,—
ঐ পিঁপড়ের অন্তরের যবনিকা
পড়ে রইল চিরদিন আমার সামনে,
আমার সুখে দুঃখে ক্ষুব্ধ
সংসারের ধারেই।
ওদের ক্ষুদ্র অসীমের বাইরের পথে
আমি যাই সকালে বিকালে,
দেখি, শিউলি গাছে কুঁড়ি ধরচে,
টগর গেছে ফুলে ছেয়ে॥
২৪ ভাদ্র ১৩৩৯