পুনশ্চ/পত্র
পত্র
তোমাকে পাঠালুম আমার লেখা,
এক-বই-ভরা কবিতা।
তারা সবাই ঘেঁষাঘেঁষি দেখা দিল
একই সঙ্গে এক খাঁচায়।
কাজেই আর সমস্ত পাবে,
কেবল পাবে না তাদের মাঝখানের ফাঁকগুলোকে।
যে অবকাশের নীল আকাশের আসরে
একদিন নামল এসে কবিতা,—
সেইটেই পড়ে রইল পিছনে।
নিশীথ রাত্রের তারাগুলি ছিঁড়ে নিয়ে
যদি হার গাঁথা যায় ঠেসে,
বিশ্ব-বেনের দোকানে
হয়তো সেটা বিকোয় মোটা দামে,
তবু রসিকেরা বুঝতে পারে, যেন কমৃতি হোলো কিসের।
যেটা কম পড়ল সেটা ফাঁকা আকাশ,
তৌল করা যায় না তাকে,
কিন্তু সেটা দরদ দিয়ে ভরা।
মনে করো একটি গান উঠল জেগে
নীরব সময়ের বুকের মাঝখানে
একটি মাত্র নীলকান্ত মণি,—
তাকে কি দেখতে হবে
গয়নার বাক্সের মধ্যে।
বিক্রমাদিত্যের সভায়
কবিতা শুনিয়েচেন কবি দিনে দিনে।
ছাপাখানার দৈত্য তখন
কবিতার সময়াকাশকে
দেয়নি লেপে কালি মাখিয়ে।
হাইড্রলিক জাঁতায়-পেষা কাব্যপিণ্ড
তলিয়ে যেত না গলায় এক-একগ্রাসে,
উপভোগটা পুরো অবসরে উঠত রসিয়ে।
হায়রে, কানে শোনার কবিতাকে
পরানো হোলো চোখে দেখার শিকল,
কবিতার নির্ব্বাসন হোলো লাইব্রেরিলোকে;
নিত্যকালের আদরের ধন
পারিশরের হাটে হোলো নাকাল।
উপায় নেই,
জটলা-পাকানোর যুগ এটা।
কবিতাকে পাঠকের অভিসাবে যেতে হয়
পটল-ডাঙার অম্নিবাস-এ চড়ে।
মন বলচে নিঃশ্বাস ফেলে—
আমি যদি জন্ম নিতেম কালিদাসের কালে।
তুমি যদি হতে বিক্রমাদিত্য-
আর আমি যদি হতেম—কী হবে বলে।
জন্মেচি ছাপার কালিদাস হয়ে।
তোমরা আধুনিক মালবিকা,
কিনে পড় কবিতা
আরাম কেদারায় বসে।
চোখ বুজে কান পেতে শোনো না;
শোনা হলে
কবিকে পরিয়ে দাওনা বেলফুলের মালা,
দোকানে পাঁচ শিকে দিয়েই খালাস॥
১০ ভাদ্র, ১৩৩৯